মানুষটা হাস্পাতালের বিছানায় শুয়ে। কয়েক মাস হল। বয়েস হয়েছে, লোকে বলে। এখন মারা গেলে অস্বাভাবিক হবে না, তিনিও বিশ্বাস করতে চান। তবু কান্না পায়। প্রস্টেট ক্যানসার, সারা শরীর ছড়িয়ে গেছে।
একদিন স্নান করে শুয়ে আছেন। হঠাৎ দেখলেন ছাদটা উড়ে গেল। হাস্পাতালের মাথার উপর আকাশটা নীল। তার বিছানাটা নড়ে উঠল। দেওয়ালগুলো ভেঙে মিলিয়ে গেল বাজারের মধ্যে। তিনি বাজারের মাঝখানে শুয়ে। চারদিকে হাজার মানুষের চীৎকার, কথাবলা, হাসিঠাট্টা, কেনাবেচা। শুয়ে শুয়ে দেখতে দেখতে, অনেকদিন পর সুস্থ মানুষের উষ্ণতায় আরাম পেতে পেতে ঘুমিয়ে পড়লেন।
হঠাৎ একটা হ্যাঁচকা টানে জেগে উঠে দেখেন, অন্ধকার হয়ে গেছে। বাজারের মোড়ে মোড়ে অর্ধনগ্ন মহিলার সারি, ছিনতাই-তোলাবাজ-খুনী দেওয়ালে মাকড়সার মত আটকে, শিকারের খোঁজে। মানুষে মানুষে ফিসফিস কথা। মনের মধ্যে তীব্র ঘূর্ণি। ঘূর্ণির তলাটা শঙ্কুর নীচের সূচালো দিকের মত। সব চিন্তা, সব পাপ, সব অপরাধেচ্ছা ফালা ফালা করে ঢুকে যাচ্ছে ভিতরে। অসহায়ের মত মানুষ, কলার খোসার মত রাস্তার মোড়ে মোড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
অবসাদের গভীরে একটা সুর বাজছে। বিষাদের সানাই। কিন্তু সুরের কেন্দ্রে যে সুর, সে তো বিষণ্ণ নয়! সে চির উজ্জ্বল মানবাত্মার করুণার স্বর। সে স্বর সুর হয়ে খুব ক্ষীণ কণ্ঠে বেজে চলেছে সমাজের অলিতে গলিতে।
মানুষটা হাস্পাতালের বেড থেকে নামল। ঈশ্বরকে পাশ কাটিয়ে, অনুশাসন, নীতিগুলোকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে, রাস্তার মোড়ে ফুটপাথের উপর এসে বসল। মৃত্যু হেরে গেছে। জীবন মোহমুক্ত। ঈশ্বর রামধনুর মত মিলিয়ে গেছে। বাতাসে ভর করে একটাই সুর ফিরে ফিরে বাজছে - মানুষের আত্মার চির নির্মলতা, চির করুণাময়তা, চির বিষণ্ণতা।
শুভ জন্মদিন দস্তইয়েভস্কি।