তারপর কেউ কাউকে চিনতে পারল না
সবাই বলল, মার মার....
কেউ জানল না সকালে কে কি খেয়ে এসেছে, কিম্বা কার কার খাওয়া জোটেনি। কিম্বা কার বাড়ির ওষুধের বিল কত আসে? কার ছেলেটা, কার মেয়েটা চাকরি পায়নি? শিক্ষা সম্পূর্ণ করেও। কিম্বা কারোর কারোর শিক্ষার গণ্ডী কেন প্রাথমিক স্কুল পার হল না। কেউ জানতে চাইল না।
এ সব কথা কেউ জানতে চাইল না। শোক, অভাব, দু:খ, ক্ষোভ... গাড়ি চাপা কুকুরের মত কয়েকবার কেঁউ কেঁউ করে শান্ত হয়ে গেল..... সবাই বলছে মার মার মার....
তারপর সব শান্ত হয়ে গেল। ক্লান্তিতে আর অবসাদে হারজিতের কথা মনে না থাকলেও, সবার মনে হল, কিছু একটা হল...অনেকদিন পর...মড়া পাঁক অনেকদিন পর গন্ধ ছড়ালো... কিছু তো হল....
কেউ জানতে চাইল না কে কি পেল... কার বাড়ি কত টাকার ওষুধের বিল এলো.... কার পড়াশোনা কাকে কোথায় নিয়ে গেল... অথবা সন্ধ্যের আকাশে যখন চাঁদ উঠল আধখানা.... বা ভর্তি সিলিণ্ডারের পয়সা না দিতে পেরে, ফাঁকা সিলিণ্ডারের পাশে বসে ঘুঁটে জ্বেলে যে রান্না করল.... বা সারাদিন টিউশান পড়িয়ে বাবার হরলিক্সের টাকাটা মায়ের হাতে দিয়ে যে স্নানে ঢুকল.... তাদের কি কি পার্থক্য হল.....
ফুটপাতের কোণে জন্মানো ছোটো আগাছা গোত্রের চারাগাছটার উপর যখন কয়েক পশলা বৃষ্টি পড়ল.... যখন শেষ ব্যাণ্ডেল লোকালটা ফাঁকা স্টেশান কাঁপিয়ে চলে গেল.... তখন কোনো এক পাগল পাশ ফিরে শুলো.... কোনো এক ভিখারি নোংরা জলের বোতল থেকে দু ঢোক জল খেয়ে পচা রুটির ঢেকুর তুলে বলল, শালার বৃষ্টি....
কেউ জানল না কে কাকে কেন মারতে গিয়েছিল.... এমনিতে কারোর মনে থাকে না..... তারাই মনে রাখে যাদের পুরোনো খাতা ঝেড়ে ধুলো উড়িয়ে চোখ ধাঁধিয়ে লাভের গুড় চাটে.... দল পাকিয়ে মারে আর মার খাওয়ার মতলব আঁটে...
কুকুরটা খোলা আকাশের নীচে শুয়ে.... কালকের অপেক্ষায় নয়... আজকে এই মুহূর্তে বেঁচে আছে, সে-ই আনন্দে.....
সেও জানে না, কারা কাকে মারতে গিয়েছিল.... কেন গিয়েছিল...
তবু কাল হয়... পরশু হয়.... মাস বছর হয়.... মানুষ আর মানুষ হয় না....