আমার জীবনে মহালয়ার সকাল শুরু হয় হাওড়ায়। যেহেতু জন্ম সেখানে। তারপর কাঁচরাপাড়ায়। বাবার রেলের চাকরির সূত্রে রেলকলোনীতে। সে ছিল সুরের প্রভাতী মহালয়া।
কিন্তু মহালয়ার সকাল অ-সুরের আতঙ্কে পরিণত হল হালিশহরে আসার পর। মাঝরাত থেকে কান ফাটা বাজির শব্দ। এখনও চলছে আমি যখন এ পোস্ট লিখছি। কানের পাশে শব্দাসুরের তাণ্ডব। কোথায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণভদ্রের সেই চণ্ডীপাঠের মাধুর্য আর কোথায় পঙ্কজমল্লিকের অসামান্য ঐশ্বরিক সুরের মধ্যে অবগাহনের অবকাশ? বিকট শব্দ একটা স্নিগ্ধ ভোরকে কিভাবে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে তার নিদর্শন আমার চারপাশ এখন।
শব্দবাজি সন্ধ্যেবেলা শুনতে অভ্যস্ত ছিলাম হালিশহরে আসার আগে অবধি। সারাদিনের নানা কোলাহলের সঙ্গে সে মানিয়েও যেত। বিশেষ করে কালীপূজোর সন্ধ্যেতে। কিন্তু মাঝরাত আর ভোরের সময় এই তাণ্ডব কি আদৌ স্বাস্থ্যকর যখন চেতনা, শরীর সম্পূর্ণ জাগ্রত হয়ে ওঠার সুযোগ পর্যন্ত পায়নি? তারপর সারাটা দিন একটা তাণ্ডবের মধ্যে রাত ভোর কাটানোর ক্লান্তি নিয়ে বেড়ানো।
একসময় মা অসুস্থ ছিলেন, এখন বাবা। বাড়িতে অসুস্থ মানুষ থাকলে তার সারাটা রাত ঘুমাতে না পারার সমস্যা যে কি হতে পারে সে আর ভাষায় বোঝাই কি করে? কিন্তু সমস্তটাই মেনে নিতে হবে, কারণ এ আমাদের পাব্লিক ধর্মীয় ভাবাবেগ, আমি রুচির কারণে ব্যতিক্রমী হলে বা পরিস্থিতির কারণে বিপন্নবোধ করলে আমার উৎসবামোদি সমাজের কিস্যু আসে যায় না।
আমি হালিশহরে আসা ইস্তক আর মহালয়া শুনি না। ক্রমে একটা শান্তস্নিগ্ধ শিশিরভেজা, শিউলির গন্ধ মাখা ভোর হতে দেখা আর তার সাথে দেশিটোড়িতে "অখিল বিমানে" সুরে আচ্ছন্ন হওয়ার সুযোগ কোথায়? আপনার কানের পাশে যে প্রকৃতিদত্ত শ্রবণ-সহ্যসীমা ছাপিয়ে, আপনাকে কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে ফাটছে বোমার মত বাজি! আর অসুস্থ মানুষ? হে হে, হাসালেন, আত্মত্যাগ করতে শিখুন, এ জনগণের উৎসব!