বোবা ছেলেটা চায়ের দোকানে কাজ করে। সকাল থেকে রাত শুধু কয়েকটা স্বরবর্ণ আর হাত নেড়ে নেড়ে সংসারে দাঁড় বেয়ে চলে।
মাঘের আকাশে মেঘ ছেঁড়া চাঁদ। ভিজে রাস্তার উপর হাঁটু মুড়ে বসে, সে কুকুরছানা নিয়ে খেলছে। দোকানে খদ্দের নেই। খদ্দের এলে তাদের দেখিয়ে হাতে সাবান দিতে হবে। নইলে তার হাত থেকে কিচ্ছু নেবে না কেউ। দোকানের মালিক শিখিয়েছে।
দোকানে লোক এলো। সে হাতে সাবান দিয়ে চায়ের দুধে চা-পাতা ফেলে দিল। মালিক বড়বাজারে গেছে। দুধ ফুটছে। কুকুরছানা তিনটে ভিজে রাস্তার একটা ধারে বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
দু'কাপ চা দিল খদ্দেরদের হাতে। টাকা নিল। ফেরত দিল। একজন দুটো বিস্কুট চাইল। বিস্কুট নিয়ে শাড়িটা সামলে রাস্তার উপর বসল উবু হয়ে। বিস্কুট ভেঙে ভেঙে দিল কুকুরছানা তিনটের সামনে। চা'টা শেষ হয়নি পুরো তার। বেঞ্চে রাখা। ভেজা ভেজা খবরের কাগজের পাশে।
ছেলেটা বাইরে এসে দাঁড়ালো। দেখতে দেখতে মাঘের আকাশে আবার মেঘ করে এলো। বৃষ্টি শুরু হল ঝিরিঝিরি। কুকুরছানাগুলো দৌড়ে এসে ঢুকল দোকানে।
সবাই দোকানে ভিতর এখন। ছেলেটার ভালো লাগছে। ঘরের মত লাগছে। বাড়ির মত লাগছে। কুকুরগুলো পায়ের কাছে বসে।
বৃষ্টি ধরল। যে বিস্কুট খাওয়াচ্ছিল, সে বিস্কুটের দাম দিল। বাইক চালিয়ে চলে গেল দু'জন। কুকুরগুলোও নেই। ফাঁকা দোকান। রাত বাড়ছে। মাঘের আকাশে মেঘ কেটেছে আবার। চাঁদের মুখ ম্লান। ছেলেটা সব স্বরবর্ণ নিয়ে একা বসে আছে। অপেক্ষা করছে না কারুর। সহ্য করছে। মানিয়ে নিচ্ছে। মাঘের অসময়ে বৃষ্টির মত, অসময়ে বাড়ির জন্য মন খারাপ হওয়া। কাল নাকি বৃষ্টি ধরে যাবে। রোদ উঠবে। মালিক বলছিল।