Skip to main content

মায়ের বড় হওয়া মফস্বলে। মায়ের সময়ে সেটা ঠিক মফস্বলও না। গ্রামই বলা চলে। দাদু সেখানকার সরকারি হাস্পাতালের চিকিৎসক ছিলেন।

মায়ের মুখে শুনেছিলাম মায়ের স্কুলে একজন একবার এক শিক্ষক এসেছিলেন শহর থেকে। তিনি নাকি স্কুলে ঢুকেই বলেছিলেন, বাব্বা, এত মানুষ, আমি তো ভেবেছিলাম এই অজ পাড়া গাঁয়ে শুধু কিছু বাঁদর গরু গাধাই ক্লাসে ভর্তি থাকবে।

আজ একজনের পোস্টে দেখলাম প্রায় একইরকমের ভাষা। তিনি খুব সম্ভবত কোনো বক্তৃতা দিতে আসবেন। আসার আগে সন্দেহ প্রকাশ করছেন, তেমন বেশি কিছু আশা তিনি মফস্বল বলে পোষণ করছেন না, কারণ মফস্বল জায়গা, কেমন দর্শক হবে! পরে তাঁর ধারণা বদলেছে সে আলাদা কথা। কিন্তু এই ধারণাটা রাখার কি মানে আমি বুঝি না, মফস্বল জায়গা মানেই সব অশিক্ষিত, অল্প শিক্ষিত মানুষ থাকবে? কোথা থেকে জ্ঞানী লোকেদের ভিড় শুরু হয়? মানে কলকাতার কত রেডিয়াসের মধ্যে? আমাকেও কেউ কেউ বলেছেন, আপনি মফস্বলে থেকে এই সব বই পড়েন? মানেটা কি? আমার কি মনসামঙ্গলের বাইরে আর কিছু পড়া উচিৎ ছিল না?

মফস্বলে অনেক অসুবিধা আছে। ভালো লাইব্রেরি নেই। কলেজস্ট্রীট নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু তাই বলে কোনো চর্চা নেই? এখানে সব মূর্খ হয়ে কালাতিপাত করছে আর মেট্রো শহর হলেই অলিতে-গলিতে সব মাথার পিছনে আলোর বলয় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে - একি খুব যুক্তির কথা হল?

মেট্রো শহরে বড় হওয়া কচিকাঁচারা এসব বলে মানা যায়। কিন্তু একটা বয়সের পর এসব কথা কেমন একটা শোনায় না? এটা অজ্ঞানতা, না তাচ্ছিল্যের ভদ্র প্রকাশ জানি না। তবে মনে হয় ভাবনাটা একটু বদলানো দরকার। একটু ভাবা উচিৎ। আপনারা পাণ্ডিত্যপূর্ণ আলোচনা করবেন আর মফস্বলে সবাই বসে বসে মাছি মারবে, এতটা কিন্তু সত্যি নয়। কলকাতার বাইরে বড় বড় অনেক শহর আছে। সেখানেও অনেকে বইটই পড়েন, পড়াশোনা ইত্যাদির চর্চাও হয়। এটা বাস্তব। দেবেনবাবুর পরিবারের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম, তাঁর ছেলে যা করেছিলেন সেও কলকাতা থেকে খানিক দূরে গিয়েই। তা বলে বলছি না যে বর্ধমান, কৃষ্ণনগর, বহরমপুর, জলপাইগুড়ি, ত্রিবেণী ইত্যাদি সব শান্তিনিকেতন হয়ে আছে। তবে সে যে আমাজন বা সুন্দরবনের গভীরতম জঙ্গলে বসবাসকারী পশুদের (মানে আপনারা যে মাপকাঠিতে ভাবেন আরকি) থেকে যথেষ্ট উন্নত, সে আপনাদের হলফ করে বলতে পারি।

যা হোক। এসব ভাবেন ভাবুন। তবে সোশ্যালমিডিয়ায় লেখার আগে ভাববেন যে এ মিডিয়া মফস্বল অবধি এসে পৌঁছায়। আর এ মফস্বলের মানুষদের আপনাদের ধন্য করাই যে একমাত্র কাজ তা নয়, তাদের নিজস্ব লড়াই আছে, চর্চা আছে। আপনাদের দয়াদাক্ষিণ্যের উপর তা নির্ভর করে না। অজ্ঞানতাকে যে আত্মতুষ্টির বোধ তোষণ করে রাখে তা বইয়ের পাতার অক্ষরের আঘাতে যায় না, তার জন্য বাইরে বেরোতে হয়। চোখকান খোলা রাখতে হয়।