Skip to main content

 

আবদারকে সেলিব্রেট করা যায়? যায়। এই একটা দিনে যায়। ভাইফোঁটার দিনে। সেদিন প্রয়োজন মুখ চুন করে ঘরের কোণায় বসে থাকে। সারা ঘর দাপিয়ে বেড়ায় আবদার। প্রয়োজন বলে, লাফাও লাফাও... এই একটাই তো দিন। আবদার বলে, এই একটা দিনের মাহাত্ম্য তুমি বুঝবে না। তুমি হিসাব বোঝো, মাধুর্য বোঝো না।

আজ ফেসবুক জুড়ে অনেক অনেক ছবি। ভাইবোনের ছবি। চোখেমুখে আবদারি আবদারি ভাব। কেউ নাচের ভিডিও দিচ্ছে। কেউ গানের। কেউ হুল্লোড়ের। ভালো লাগছে। তৃপ্তি লাগছে।

আজ একটু বেরিয়েছিলাম। রাস্তাঘাটে ভাইবোনদের সাজ। একসাথে বেরোনো। একসাথে হুল্লোড় দেখলাম। মায়ের মন্দিরে দাঁড়িয়ে, আরতি হচ্ছে। বোন দাদার পাশে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ দাদার কাছে গিয়ে, দাদার বাঁ কাঁধটার উপর নিজের মাথাটা রেখে বলল, কদ্দিন পর এলাম বল।

বোনের পরনে নতুন শাড়ি। ভাইয়ের গায়ে নতুন পাঞ্জাবি। তাদের ছেলেমেয়েরা, স্বামী, বউ সবাই আছে এদিক ওদিক ছড়িয়ে। কিন্তু এই মুহূর্তে তাদের ওই আবদারের ওমটাই ঢাকের আওয়াজ, কাঁসরের আওয়াজ, উলুধ্বনি ছাপিয়ে বেজে উঠল।

মায়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার ভাই নেই? কিম্বা দাদা? শাস্ত্রে পুরাণে কী লেখে সে দরকার নেই.... এমনি এমনি জিজ্ঞাসা করছি.... আছে তোমার?

হঠাৎ তাকিয়ে দেখি নাট মন্দিরে হইহই করে এলো কচিকাঁচার দল। দারুণ সেজে তারা। আদিবাসী। হাতে থালা বাসন আর চালের প্যাকেট। কোথাও নাচের অনুষ্ঠান ছিল। সেই কর্তৃপক্ষ থেকে ওরা দিয়েছে। বাচ্চাগুলোর আনন্দে ডগমগ চোখের মধ্যে ভেসে উঠল কী মধু! ওদের হাসিতে প্রাণের সবটুকু রস ঝড়ে পড়ছে। শেষ হচ্ছে না তবু। মাকে প্রণাম করে অন্ধকার রাস্তায় মিলিয়ে গেল।

মানুষ সম্পর্ক ছাড়া বাঁচে না। কারুর না হয়ে বাঁচে না। ভালোবাসায় অধীন না হতে পারলে সবটুকু অধীনতার অভাব অর্থহীন হয়ে ব্যঙ্গ করে যেন। সাধক বলে, ঈশ্বরও অধীন হবেন বলে সৃষ্টি করেন। সৃষ্টির অধীনে অধীন হবেন। মাধুর্যে। ভক্তবৎসল নাম হবে। ভক্ত গাইবে, "আহা তোমার সঙ্গে প্রাণে খেলা.... তুমি সাধ করে নাথ ধরা দিয়ে আমারও রঙ বক্ষে নিও...... "। কী অসম্ভব স্পর্ধা!

ওই যে বললাম, মাধুর্যের কথা। মাধুর্য হিসাবের বাইরের কথা। রসিকের কথা। সেও সত্য। বুদ্ধির অহংকার বোঝে না। বুদ্ধির মুকুরে বোধের উপলব্ধি বোঝে। মোহনায় না এলে সাগর নেই। মোহনা তার অস্তিত্বের অবসান না। পূর্ণতা। আবদার সেই মাধুর্য। আবদার না থাকলে জীবনে রইলটা কী? শুধুই দাবীদাওয়া?

[2 November 2024]