শ্রীরামকৃষ্ণের খুব কাছাকাছি কয়েকজন সাধারণ মানুষ কতদিন কাটিয়ে গেল। জ্ঞানের তাপে দগ্ধ হল না। মাধুর্যে পরিপূর্ণ হল। আজীবন।
মাধুর্যের প্রফেসি হয় না। কারণ মাধুর্যের কোনো বাণী নেই। ভবিষ্যৎ নেই। অতীত নেই। মাধুর্যের শুধু "এখন" আছে। এই মুহূর্ত আছে। শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে গেলে তাই সবই "এখন" এর কথা। আশা ভবিষ্যতের দিকে কাঙালের মত তাকিয়ে থাকায় নয়। বর্তমানের সবটুকু নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলার মাধুর্যে। শ্রীরামকৃষ্ণ সেই মাধুর্যের ভাণ্ডার নিয়ে বিলিয়েছেন। তাঁর ঈশ্বর মাধুর্যের ভাণ্ডারী। সে নানা রঙে ছুপায়। যে যে রঙে ছুপতে চায়। কাউকে রঙহীন করে তোলা সে ভাণ্ডারীর কাজ নয়।
জীবনে মাধুর্য চলে গেলে মানুষ বড় শুষ্ক তাত্ত্বিক হয়। তাত্ত্বিক তার্কিক হয়। তর্ক তথ্যের পর তথ্যের ভাণ্ডার খোলে। রসের সন্ধান পায় না। ভালোবাসাকে ভাবে একটা অনুভব শুধু। একটা আবেগ। জাল ফেলে। কাদা মাখে। ভাবে এই সার।
শ্রীরামকৃষ্ণ ভালোবাসছেন। মাধুর্য ছেনে আনছেন হৃদয় নিংড়ে। বলছেন "মা" দিচ্ছে উপুড় করে। "মা" কে? যাকে গড়ে ভেঙে শেষ করা যায় না। যার ইতি করা যায় না। তাঁকে শূন্য করা যায় না। কোনো একটা বিশ্বাসকে, মতকে শূন্য বলা যায়। অস্তিত্বকে শূন্য বলা যায় না। মানুষ কোনোদিন শূন্যকে অনুভব করতে পারে না পূর্ণভাবে। কারণ যে অনুভব করে সে থেকেই যায়। তাকে সরানো যায় না। তাই মানুষের সব অনুভব আংশিক। সব জ্ঞান আংশিক। কিন্তু মাধুর্য পরিপূর্ণ। কারণ চিনির রুটি আড় করেই খাও সোজা করেই খাও, মিষ্টি। মাধুর্যের অংশ হয় না। কতটা ডুববে তার পার্থক্য হয়। গঙ্গার যেখানেই ডোবো সেখানেই গঙ্গা।
তাই মানুষ শূন্যকে অনুভব করতে পারে না। যে অনুভব করে তাকেও যদি সরিয়ে দিই? নির্বিকল্প সমাধি? বিকল্প নেই। এক আছে। জ্ঞাতা জ্ঞান এক। সেখানে ভাষা নেই। অনুভব নেই। চিন্তা নেই। কী আছে? কে বলবে? নুনের পুতুল সমুদ্র মাপতে গিয়েছিল। শূন্য নিমজ্জিত পূর্ণে। তাজ্জব তাজ্জব!
এত খবরে কাজ নেই। মদের দোকানে কত মদ জেনে কী হবে? ভালোবাসা, মাধুর্য, চেতনা, আনন্দ, ঈশ্বর..সব এক কথা।
গলায় ক্যান্সার। মৃত্যু শিয়রে। চারদিকে হাহাকার করা চোখ এত এত। কোথায় যাচ্ছ ফেলে? সব কী শেষ হবে?
খোলটা যাবে এবার। সময় হয়েছে। একটা নতুন মাধুর্য দিয়ে গেলাম। মা শব্দের মাধুর্য। চেনা ডাক। মন্ত্র না। ডাক। মা নামের মাধুর্যে তরী ভাসাও। পার হও কী না হও দেখোই না। ভয় নেই। এ জীবনটা রয়ে গেল। ছাঁচ। এক একবার এসে মিলিয়ে নিও। হারিয়ে যাবে না। মা নামের মাধুর্যে ডোবো। সব পাবে।