বলে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করো… একি কথা গোঁসাই? যাকে দেখা যায়, ছোঁয়া যায়, যার কথা শোনা যায় তার উপরেই নির্ভর করা যায় না, এদিকে বলে কি যে দেখাশোনার বাইরে তার উপর নির্ভর করো? একি কোনো কাজের কথা হল গোঁসাই?
গোঁসাই আজ ভীষণ সেজেছে। তার গলায় মালা। পরনে কি চমৎকার নীল কাপড়! মাথায় একটা শিখীপাখা… কি সাজ গো গোঁসাই এ?
গোঁসাই বাগান না জঙ্গল যাই বলো, তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে। চারদিক জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে। পলাশে, শিমূলে লালে লাল চারদিক। গোঁসাই এসে দাঁড়িয়েছে তার মাঝে।
গোঁসাই বলল, নির্ভর কি চোখ, কান, নাক করে গো… নির্ভরতা এক অনুভব। এক সুখ।
বললাম, সুখ না ছাই গোঁসাই… নিজেকে ঠকানোর এক উপায়।
গোঁসাই হেসে বলল, একি রেশনের লাইনে দাঁড়ানো গো যে শেষে কি পাওয়া যাবে না যাবে-র হিসাব কষবে? লাভক্ষতির হিসাবে কেউ নির্ভর করে?
তবে কিসের জন্য করে?
ভালোবাসার জন্য। তুমি বলো, ভালোবাসায় নির্ভরতা নেই? তুমি যাকে ভালোবাসো তার দিকে ক্রমে ঝুঁকে পড়ো না? তোমার সুখদুঃখ সব কিছু তার সুখদুঃখের উপর নির্ভর করে না?
কিন্তু হাওয়াকে কি ভালোবাসা যায় গোঁসাই?
ভালোবাসা মানুষ নিজের বিশ্বাসকে করে। হাওয়াকে না, শরীরকেও না কোনো। আচ্ছা এমন হয়নি, তুমি ভালোবাসো অথচ বিশ্বাস রাখতে পারছ না? সে কি আদতে তবে? সে আসক্তি… বিশ্রী আসক্তি… শেষে মানুষ ডুবে মরে সেই আসক্তির ফেরেই… দেখোনি?
দেখেছি…
ভালোবাসা, নির্ভরতা, বিশ্বাস সবই এক কথা গো বাবাজী… বুঝলে? এককে ছেড়ে আরেক থাকার জো নেই। দেখো না মানুষ কতরকম তত্ত্বে বিশ্বাস করে রাজনীতি, অর্থনীতি এসবের জন্য প্রাণপাত পরিশ্রম করে… আমার গোবিন্দও তেমন এক তত্ত্ব….
কি তত্ত্ব?
সমগ্রের তত্ত্ব… অনন্তের তত্ত্ব….
বুঝলাম না…
একি বোঝার জিনিস বাবাজী… এ ডোবার জিনিস…. ভয়, বাসনা থাকতে হওয়ার জিনিস নয়…. ভয়, বাসনা থাকতে প্রেম হয়? বাসনার জগতে প্রেম মরীচিকা…. প্রেম সমগ্রের তত্ত্ব…অখণ্ডের তত্ত্ব… বাসনা ক্ষণিকের… পূরণ হলেই শেষ… না পূরণ হলে ছটফটানি..ক্ষোভ…. প্রেমে অনন্ত তৃষ্ণা… তাড়া নেই কোনো…. ক্ষোভও নেই…. তাই ভয়ও নেই…. হল না নির্ভরতা?...
বুঝলাম না গোঁসাই… কিন্তু মনে টান পড়ল… ভিতর দিকে… কিন্তু তোমার এ ধারা সাজ কেন গো আজ?....
আমি নিজেই মালী আর নিজেই সাজি আজ… নিজেই মধুপ.. নিজেই পুষ্প আজ….. তুমিও এসো… সাজো…
আমার দেরি আছে গোঁসাই….
তবে এসো…. সময় হলেই এসো…. আমার তাড়া নেই…