আপনাদের বলছি, সেই সব বাবা-মায়েরা, শিক্ষক-শিক্ষিকা-পাড়া প্রতিবেশীরা...
আপনারা বিন্দুমাত্র আঁচ পান না, একটা ছেলে ক্রমশ আচার ব্যবহারে চেনা ছকের গণ্ডী পেরোচ্ছে? কোথাও যেন তার ব্যবহারটা ঠিক নয়। তার মধ্যে ক্রমে বাসা বাধছে অপরাধকামী সত্তা..ছোটো ছোটো অপরাধ কি অবহেলায় হারিয়ে যেতে থাকে প্রশ্রয়ে...আমি আমার পরিবারে..আশেপাশের অনেক পরিবারে দেখে আসছি...'এই বয়সে ছেলেদের এরকম একটু-আধটু কৌতুহল থাকেই...ও বয়েসের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে'...
ঠিক কিন্তু হয় না। সে ধর্ষক না হলেও, আরো অনেক কিছু হয় যা আলো নিভলে মশারির মধ্যে কেউ কেউ হয়ত টের পায়। যা আমাদের মহামান্য আদালতের চোখে নিরপরাধ ঘটনা হলেও। একটা বয়েসে এগুলো আটকানো যেতে পারত কিন্তু। অনেক রকম পদ্ধতি আছে এখন একটা সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার। কাউন্সেলিং তার মধ্যে একটা বড় পথ।
দায়িত্বটা আসলে কিন্তু সবার। শুধু বাবা মায়ের নয়। কারণ বিষবৃক্ষের ফল শুধু নিজের গাছটার ক্ষতি করে কি? নয় তো। আমাদের আশপাশ সম্বন্ধে আমদের আরেকটু সচেতন হতেই হবে। স্কুলগুলোতে সিলেবাসের দায়ভার ছাত্র-ছাত্রীদের ঘাড়ে চাপিয়ে সচল মানুষ বানাবার পাশাপাশি, একটা আত্ম-নিয়ন্ত্রণক্ষম মানুষ বানাবার দায়ভার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিতে হবে। প্রয়োজনে এই বিষয়ের সাথে যুক্ত পেশাদার ব্যক্তিবর্গের সাহায্য চাইতে হবে।
কথা বলুন, নিজের ছেলে হোক, আত্মীয়ের ছেলে হোক, পাড়ার ছেলে হোক, ছাত্র হোক..তার সাথে কথা বলতে অভ্যাস করতে হবে। যৌনতা নিয়ে তার কি চিন্তা-ভাবনা জিজ্ঞাসা করুন। শিশু হোক, কিশোর হোক, পশু তো নয়! কথা তো বলতে পারে! কথা বলুন, সরাসরি যৌনতা নিয়ে তার কি ধ্যান-ধারণা শুনুন। পর্ণ থেকে কণ্ডোম, যা বিজ্ঞাপনের হাত ধরে ওই বয়সের কাছে আগাম পৌঁছাচ্ছে, সে বিষয়ে তার মতামত শুনুন। আগ্রহ নিয়ে শুনুন। অযথা জ্ঞান দেবেন না, মনে রাখতে হবে যৌনতা কোনো অর্জিত বা ন্যস্ত চাহিদা নয়, এটা instinct, সহজাত প্রবৃত্তি।
আমি দীর্ঘদিন আমার ছাত্রদের সাথে এই বিষয়ে কথা বলে আসছি সরাসরি, তার একটা কারণ অবশ্যই আমাকে 'জীবন বিজ্ঞান' পড়াতে হয় তাই নিয়ম মাফিক সামনে চলেই আসে। তবু না এলেও আমি প্রসঙ্গ উত্থাপন করেও তার মনোভাব জানতে চাইতাম। কারণ সহজাত প্রবৃত্তিগুলোকে বোধের আলোতে সুনিয়ন্ত্রিত করেই সভ্যতা তৈরি হয়েছে। এই তো মূলসূত্র, আজই বা সব ঘেঁটে যাবে কেন? তারা অনেক কথা বলতে চায়, মনে রাখতে হবে, আবারও বলছি, 'বলতে চায়'। আগে মন দিয়ে শুনুন, তারপর নিজের কথাগুলো তাদের ধারণার পাশাপাশি রাখুন, তাদের নস্যাৎ করে দিয়ে নয়। সে ধীরে ধীরে ঠিক ভুল বুঝতে শিখবে। সাহায্য করুন, একটু দূর থেকে, ট্রেইন করতে যাবেন না, ওরা শিশু বা কিশোর, পশু নয় কিন্তু। মানুষের মত ব্যবহার করুন। যদি কোনো রকম দুর্বোধ্য অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছেন, আবারও বলছি প্রফেশনালদের সাথে কথা বলুন। দেখেছি প্রচুর লাভ হয়। মোট কথা উচ্চাসন ছেড়ে নামার সময় হয়েছে। অন্তত বেশিরভাগ মানুষ যদি আমরা এভাবে সচেতন হতে পারি আশাপাশের ছেলেগুলোর বেড়ে ওঠার সময় তবে হয়ত এই ধরণের ঘটনার কিছুটা সংখ্যা কিছুটা হলেও কমবে।
আর কিছুতেই কিছু না হলে, হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা হোক, অপরাধ ঘটার অপেক্ষায় না থেকে। প্রয়োজন হলে মায়েদের অনুরোধ, তারাই এ কাজটা করুন। কারণ আমি এখনও বিশ্বাস করি 'মায়ের চোখ এড়ানো কঠিন'।