Skip to main content
মাঝরাতে


 

বটকেষ্টবাবু শেষ ট্রেনে নামলেন জগদ্দলে। বেশি লোকজন তেমন নেই। শীত পড়ব পড়ব করছে। চারদিক বেশ ঘন কুয়াশা। রিকশা নেই। অবশ্য সে আশঙ্কাই ছিল। ঘড়িতে দেখলেন বারোটা দশ। বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে আধঘন্টা তো লাগবেই। গাটা বেশ ছমছম করছে। নিজের চটির শব্দ ছাড়া বিশেষ কিছু কানে আসছে না।
 
     আরে ওটা কে? হ্যাঁ পাকড়াশি যে। তার ছেলেবেলার বন্ধু। বম্বেতে কাজ করে। বটকেষ্ট মনে মনে বললেন, জয় মা!

    দুই বন্ধু এই মধ্যরাতে, পথের মধ্যেই গদগদ হয়ে গেলেন। ক্ষুদ্র মিলনান্তক নাটিকা হয়ে গেল।

    বটকেষ্টবাবু বলেই বসলেন, তোকে দেখে ধড়ে প্রাণ এলরে মানিক (পাকড়াশির নাম), যা ভয় পেয়েছিলাম। 
    তোর সেই ভুতের ভয়টা এখনো আছে? মানিক একগাল হেসে বলল।
    তা আর নেই। তুই আর বলিস না, পেঁচার ডাক শুনে পিসির বাড়ি প্যাণ্টে হিসি করে দিয়েছিলি মনে আছে!?
    দুই বন্ধুই হো হো করে হেসে উঠল। কয়েকটা প্যাঁচা আপত্তি জানিয়ে উড়ে গেল।
এটা ওটা গল্প করতে করতে হঠাৎ বটকেষ্ট বলল, তোর সেই রামদীঘির ইংরাজী স্যারকে মনে আছে? সেই যে রে যিনি তোকে আমাকে হর্ষবর্ধন গোবর্ধন বলে ডাকতেন...
   হঠাৎ বটকেষ্ট দেখে পাকড়াশি একটা গাছের ডালের দিকে তাকিয়ে, হাঁ করে, খানিক পিছিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে।
    তার মুখের ভান দেখে বটকেষ্টর বুকটা হিম হয়ে গেল। কি দেখতে পেয়েছে ও!
    সে এগিয়ে গিয়ে পাকড়াশিকে ঝাঁকিয়ে বলল, কি হল রে? পাকড়াশির শরীর হিম বরফ!
    পাকড়াশি কাঁদো কাঁদো মুখে বলল, তুই ওই নামটা আর করিস না রে।
    স্যারের নাম?
    না না, অমুক দীঘি।
    রামদীঘি?
    পাকড়াশি মূর্ছা যেতে যেতে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, হ্যাঁ রে, বম্বের রেলে কাটা পড়ার পর থেকে ওই নামটা আর শুনতে পারি না....
   বটকেষ্টবাবুকে তিনদিন পর আই.সি.ইউ. থেকে জেনারেল বেডে দেওয়া হয়। ডাক্তার তার অজ্ঞান হওয়ার কারণ খুঁজে পাননি।

(ছবিঃ সুমন দাস)