তারপরে সে হাল ধরল। কুয়াশায় ঘেরা সকাল। একজন বললে, মাঝি তুমি পথ চেনো?
মাঝি হাসল। বলল, পথ চিনি না, মন চিনি।
যাত্রী ভয় পেলো। বলল, ভগবান!
আরেক যাত্রী বলল, মাঝি আমরা যদি হারিয়ে যাই? ফেরার পথ না মেলে?
মাঝি হাসল। গুনগুন করে কি গাইতে লাগল। দূরে ক'টা বক উড়ে এসে বসল তীরের কোল ঘেষা বড় বড় গাছগুলোর মাথায়। ছলাৎ ছলাৎ শব্দের সাথে সাথে কত রকম মাছ জলের উপরে ভিতরে নীচে নেচে নেচে ফিরতে লাগল।
মাঝি বলল, মানুষ তো হারিয়েই আছে গা। তাই তো তার এত মন কেমন করা কষ্ট! ওই তো ভবরোগ।
মাঝি আবার গাইতে লাগল।
- কি গাও মাঝি?
- গাই কই? ডাকি।
- কাকে?
- যাকে হারিয়েছি
- কে হারালো? সে না তুমি?
- সে কি আর হারায় গো। হারাই যে আমরা। চোখের নেশায় শরীর টাটায়। শরীরের ঢালে গড়ায় মন। আর ব্যস! মনে গড়াতে গড়াতে সেই কোন খাদে গিয়ে পড়ে!
- তারপর?
- তারপর কেঁদে ওঠে প্রাণী, মহাপ্রাণীর লগে!
মাঝি চুপ। যাত্রীরাও চুপ। জলের আওয়াজ আর পাখির আওয়াজ শুধু বাতাসকে মৃদু কাঁপিয়ে।
- পথ চিনেছো মাঝি?
- না, কান্না চিনেছি। এই নদীর জলের মত ভিতরের নদীতেও জমা জলকে ছাড়ো। এই নদী যেমন জলের বেগেই, জলের টানেই সমুদ্রের দিকে ছোটে, না জেনেই... এই মনের ভিতরের নদীও চেনে সে সমুদ্রের দিশা। তুমি শুধু নাও ভাসাও। পথ ওতেই পাবে। ডাক তো আছেই। শুধু সাড়া দেওয়ার অপেক্ষায়।
(ছবিঃ সমীরন নন্দী)