সারাদিন দু নাম্বার আর তিন নাম্বার প্ল্যাটফর্মে ভিক্ষা করার পর, এই রাতে, ছেলেটা ঢুলে আসা দুই চোখ টানটান করে তাকিয়ে, সিমেন্টের বেঞ্চে বসে, চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে। ওপারের প্ল্যাটফর্মে শুয়ে বাবা। মদে বেহুঁশ। সামনে দেখলে “মা” তুলে খিস্তি করবে। আরেকটু পর নিয়ে যাবে বাড়ি।
মা নেই। কোনোদিন ছিল না।
=========
মেয়েটা প্রতিদিন রাতে যখন ফেরে, মা ক্রমাগত কথা বলে যায়, সে শুধু শোনে। শুনতে শুনতে রান্না চাপায়, স্নানে যায়, ভাত বাড়ে, নিজে খায়, মাকে খাওয়ায়।
মা বলে যায়, “তোর বাবা আজও কাজে যায়নি। তোর ঠাকুমা বলেছে তোর পিসি গায়ে আগুন লাগিয়ে ছাদে বসে আছে। সাবধানে উঠবি। তোর ছেলেটা স্কুল থেকে ফিরে এদিকে এলো না তো। ….. আপনি আমার স্বামীকে বলবেন, মদ না খেয়ে আসতে…. আপনি পুলিশ তো….. না? ডোমের কাজ করেন?”.....
মেয়েটা ভাবে, অপেক্ষায় থাকে, একদিন তার মা তার মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করবে, কী রে, খেয়েছিস…. এত শুকনো কেন মুখ?
=======
বাবার পাশেই শুতে হয়। মা ঘুমের ওষুধ খেয়ে নেয় আটটা বাজলেই। বাবা অফিস থেকে ফিরে নিজেই খাবার গরম করে। নিজেই বাড়ে। সেও বসে। বসতেই হয়। একসঙ্গে খায়। খেতেই হয়। তারপর পড়তে বসে। বাবা পাশে এসে বসে। সিগারেট ধরায়। তার বুকের জামা খোলে। জামার ভিতর দিয়ে বুকে হাত রাখে। তার লম্বা চুলের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে দেয়। জিজ্ঞাসা করে কোনো অঙ্ক আটকাচ্ছে কি না। গলায় কোনো অস্বাভাবিক কিছু নেই। ঘরের দেওয়াল, ছাদ, পাখা, এসি, শিবের ছবি….সব স্বাভাবিক। এমনকি মায়ের ছেড়ে যাওয়া নাইটিটাও কী স্বাভাবিক। এরপর বাবা বলে, চলো, শুতে চলো। কী স্বাভাবিকভাবে। যেন কোথাও কিছু অস্বাভাবিক ঘটছে না। আসলে অস্বাভাবিক কিছু ঘটতে নেই যেন।
পরেরদিন মা বেলায় ওঠে। পাখিকে খেতে দেয়। কুকুরকে খেতে দেয়। আদর করে। সাজে। মার্কেটে যায়। গাড়ি চালিয়ে তাকে স্কুলে ড্রপ করে দেয়। সে কিছু বলতে গেলে, চুপ করে শোনে। তারপর অন্য কথা বলে। যেন খানিক আগের সব কথার মানে ফুরিয়ে গেছে। অক্ষরগুলো আছে। অনর্থক। মাঝে মাঝে বলে, বড় অভিযোগ তোমার!