Skip to main content

        গুরুদেবের সকাল থেকে উপোস। শিষ্যরাও কিছু দাঁতে কাটেনি সকাল থেকে। বেড়ালগুলো, কুকুরগুলো না খেয়ে। মায় কাকগুলো অবধি না খাওয়া। 
        আজ ভূমিকম্প নিবারণী যজ্ঞ হবে। আয়োজন চলছে আর না হলেও দুইমাস ধরে। সাত সমুদ্রের জল, হিমালয়ের কি কি সব জায়গা থেকে কি কি সব ফুল আনা হয়েছে। যজ্ঞের আয়োজনে বহু আমন্ত্রিত। রাজা মন্ত্রী তো আছেনই, তার সাথে নগরের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। 
        যজ্ঞ শুরু হল। গুরুদেব ধ্যানে। মাটিতে চোখ মুদে বসে গুরুদেব। শিষ্যরা বলছে, গুরুদেব তাঁর সারা জীবনের তপস্যার ভার দিয়ে ধরিত্রীর বুকে চেপে বসেছেন, বেটি আচ্ছা শায়েস্তা হয়েছে, যখন তখন কেঁপে ওঠা আর হবে না... হুম!
        হঠাৎ কি একটা হট্টগোল শোনা গেল আশ্রমের বাইরে থেকে। কে একজন মহিলা, অত্যন্ত দুঃস্থ, মানে যেমন দুঃস্থ হলে কাঙাল ভোজনে বসে, ভক্তসারিতে নয়, তেমন দুঃস্থ, সে দাবী করছে গুরুদেবের সাথে তার নাকি বহুবার শয্যা বিনিময় হয়েছে, তবে আজ এমন মহাযজ্ঞে সে বঞ্চিত কেন হবে? তাকে শাসিয়ে, ভয় দেখিয়ে, লোভ দেখিয়ে, পুরুষত্ব দেখিয়েও যখন কেউ বাগে আনতে পারছে না, তখন গুরুদেব নিজেই উঠে গেলেন আশ্রমের প্রধান দ্বারের দিকে। গিয়ে বললেন, কি চাও কল্যাণী?
        মহিলা শান্ত হয়ে গেলেন। তিনি গুরুদেবকে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করে বললেন, কিচ্ছু না প্রভু, আপনার পদরজ আর যজ্ঞের তিলক।
        গুরুদেব স্মিত হেসে বললেন, এই নাও দিলাম, পদরজ, কিন্তু যজ্ঞ...
        গুরুদেব উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। দু'চোখ থেকে করুণাশ্রু দুই চকচকে গাল বেয়ে মাটিতে পড়ল। এক ভক্ত লুটিয়ে পড়ল সেই অশ্রুসিক্ত ধুলায়। 
       গুরুদেব গম্ভীর গলায় বললেন, যজ্ঞ অসিদ্ধ হল। সবাই চমকিত হয়ে বলল, কেন প্রভু?
       গুরুদেবের চোখ থেকে আরেক দফা অশ্রু বেরোলো। মাটিতে পড়ল। পূর্বের ভক্ত সেদিকে ঝোঁকার আগেই আরেক ভক্ত তার পশ্চাৎ দেশে পদাঘাত করে সরিয়ে নিজে হুমড়ি খেয়ে সে মাটি সংগ্রহ করল, বলল, "এবার আমি!"
        গুরুদেব বললেন, যজ্ঞ অসিদ্ধ, এই রমণীর অশ্রুতে। স্বার্থের অশ্রু পাপবারি৷ করুণার অশ্রু ঈশ্বরাশ্রু। 
        সবাই দগদগে চোখে মহিলার দিকে তাকালো। মহিলা মাটিতে সাষ্টাঙ্গে শুয়ে আবার। গুরুদেব বললেন, ওকে ছেড়ে দে তোরা! ও তো নিমিত্তমাত্র। মা বলেছিলেন, এই যজ্ঞ সফল হলে আমার প্রাণ থাকত নারে। 
        গুরুদেব আবার কাঁদলেন। শিষ্যরা কাঁদল। মহিলাও কাঁদলেন। মহিলা বললেন, আমায় ক্ষমা করুন প্রভু, আমি কি সব অকথা, কুকথা বলেছি আপনার সম্বন্ধে!
        দু'হপ্তা পরেই শহরজুড়ে দারুণ ভূমিকম্প হল দুটো পরপর। বহু ক্ষয়ক্ষতি হল। সবাই বলল ভাগ্যে সেদিন মা ওই মহিলার রূপ ধরে এসেছিলেন, নইলে আজ আমরা অনাথ হতুম গুরুবিনে।
        মহিলা নিরুদ্দেশ। সারা শহরজুড়ে ধ্বংসলীলা। আশ্রমে আজ পুনরুজ্জীবন উৎসব। আর তার সাথে সেই মহিলার মূর্তিও বসল - মা গুরুপ্রাণদায়িণী।