("শংকর কহেন, জগৎ মায়া; প্লেটো কহেন জগৎ ছায়া; কান্ট কহেন, জগৎ আমাদের মনের প্রতীতি মাত্র, সত্য পদার্থ নহে। পৃথিবীর তিন বিভিন্ন প্রদেশে এই এক মত দেখা দিয়েছে, কিন্তু ইহার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ কেবল কান্ট-দর্শনের মধ্যেই আছে।"- রবীন্দ্রনাথ)
কাণ্ট (ইম্যানুয়েল কান্ট, ক্রিটিক অব পিওর রিজন -এর লেখক) জিজ্ঞাসা করলেন, উনি কি ঘরে আছেন?
বৃন্দে বলল, আছেন, আপনি যান।
কান্ট ঢুকতেই রামকৃষ্ণ বললেন, এসো এসো, এই তোমার বইটাই পড়ে শোনাচ্ছিল নরেন, আমিও তাই বলি, একসের দুধের ঘটিতে কি চারসের দুধ ধরে?
কান্ট হেসে বললেন, আমার তো মনে হয়ে একসেরও ধরে না। সে শুদ্ধ ঘটিই আমাদের নেই। আমাদের ঘটিতে 'আমি' তত্ত্ব মাখামাখি। দুধ যে রাখবেন, সেই দুধের দুধত্ব আমার ঘটির আমিত্বের সঙ্গে মিশে যা দাঁড়াবে সে দুধও নয়, আমিও নয় - সে এক মিশেল।
রামকৃষ্ণ ভেবে বললেন, সেও আছে। তবে তাঁর কৃপায় ধরা যায়।
কান্ট বললেন, আমার বোধ অন্যরকম ঠাকুর। আমি বলি তাঁর কৃপা মানে হল এইটুকু বোঝা যে তাঁকে বোঝা যায় না, জানা যায় না।
ঠাকুর বললেন, এই বোঝাটাই নেতি নেতি করে সেখানে পৌঁছানো।
কান্ট বললেন, কোথাও আর কি কেউ পৌঁছায় ঠাকুর! নিজের বুদ্ধি-বোধের সীমা বোধ হলে নিজের ঘরে নিজে ফিরে শান্তি পায় মানুষ। অকারণ আর উড়ে উড়ে আকাশ পার হব বলে পাখা ব্যথা করে না। সেই শান্তিকেই কেউ বলে নির্বাণ, কেউ বলে মুক্তি। নিজের অজ্ঞানতার থেকে নিজের মুক্তি।
ঠাকুর বললেন, আমিও বলি, এই আমি খুঁজতে যাও, দেখো, পেঁয়াজের মত, খোসার পর খোসা ছাড়াও, শেষে সব শূন্য।
নরেন বলল, নাগার্জুনের শূন্যতত্ত্ব?
কান্ট মাথা নেড়ে বললেন, সে জানি না। আমি অত পড়িনি। তবে আমার মনে হয় এই যে আমি বোধ এও একটা চিন্তা ছাড়া কিছু নয়। আমি বলে যা জানে মানুষ সে দেশ, কালের গন্ডীর মধ্যেই নিজেকে একভাবে দেখা। সেও সত্য নয়। সেও সীমাবদ্ধ বোধবুদ্ধির সীমায়, অসম্পূর্ণভাবে নিজেকে জানা।
ঠাকুর বললেন, তাই আমি বলি, নির্বিকল্প সমাধি না হলে তত্ত্বজ্ঞান হয় না।
কান্ট বললেন, সে হবে। আমার বিচারের পথ। আমি জানি আমার কোনো জানাই নির্ভুল নয়। বড়টাও না, ছোটোটাও না। সবই মিশেল।
ঠাকুর বললেন, এ বেশ কথা। শেষে যা হয় হবেখন। মা যা করেন।
কান্ট চলে গেলেন। ঠাকুর একটু হেসে গান ধরলেন,
আমার চেতনা চৈতন্য করে দে মা চৈতন্যময়ী....