সৌরভ ভট্টাচার্য
15 April 2018
কাজের ঘোরটা একটু যেন বেশি। সারাদিন দেওয়ালের মধ্যেই কেটে যায়। অফিসে যখন ঢোকে তখন বাইরে সকালের রোদ। অফিসের গেটের পাশেই একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। অফিসে জয়েন করা থেকে রণিত গাছটা দেখছে। অ্যাজ সাচ অফিসে যেদিন প্রথম ইন্টারভিউ দিতে আসে সেদিন গেটের সামনে এই গাছটাই যেন তাকে স্বাগতম জানিয়েছিল। এমন নয় যে সে কৃষ্ণচূড়া গাছ খুব ভালোবাসে। তার বাড়ি মদনপুরে। এই কলকাতার সব কিছুই তার খুব প্রাণহীন, যান্ত্রিক লাগে বরাবর। কলেজ-টলেজ সবই তো কলকাতায়। কিন্তু কেন জানি না ওর মন বসেনি কোনোদিন এই শহরটায়। আজ নয় নয় করেও প্রায় বারো বছর হয়ে গেল এই আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে তার। তবুও যেন আধসেঁকা পাঁওরুটির মত লাগে নিজেকে। কাজে একবার ডুবে গেলে অবশ্য সে অন্য মানুষ। কখন সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত হয়ে যায় হুঁশ থাকে না। প্রায়ই শেষ রাতে বাড়ি ফেরে, কিম্বা অফিসেই রাত কেটে যায়। আগে নিজের সাথে যতটা লড়াই করতে হত এখন ততটা করতে হয় না যদিও, তবুও... ওই একটা কিছু।
ওই কৃষ্ণচূড়া গাছটাই যেন তার মনের কথা বুঝতে পারে। গাছটার সাথে তার একটা আত্মীয়তা গড়ে উঠেছে এতদিনে। অফিসের বাইরে মাঝে মাঝে চা খাওয়া কি একটা কোনো ছুতোতে বাইরে চলে আসে যখনই মন খারাপ লাগে। তার বাড়িতে কিন্তু কোনো কৃষ্ণচূড়া নেই। না তো তার বাড়ির আশেপাশে। তাদের হাইস্কুল মাঠে একটা ছিল। এখন আছে কিনা কে জানে। ওয়াটস অ্যাপে ওদের স্কুলের গ্রুপটায় একবার জিজ্ঞাসা করেছিল, তমালিকা বলেছিল আছে। তমালিকা'র বাড়ি স্কুলের কাছেই। বিয়ে হয়ে গেছে। রাণাঘাটে থাকে। ওর বর কিসে যেন একটা কাজ করে, বলে ও, কিন্তু মনে রাখতে পারে না। আসলে মনে রাখতে চায় না। রণিতের ইচ্ছা করে না। রণিত ভালোবাসত। কিন্তু সেটা কোনোদিন সম্পর্কে দাঁড়ায়নি। রণিতের সব সময় একটা ভয় ভয় করেছে। কি জানি কেন। রণিতের এখন ঈর্ষা হয় যখন তখন। কেন যেন অকারণই। তাই কি হয়? কিন্তু ওই অকারণ ঈর্ষা হওয়াটাকে ও মনে মনে উপভোগ করে।
রণিতের যেদিন কিচ্ছু ভালো লাগে না সেদিন দুপুরের খাওয়াটা স্কিপ করে যায়। ওর মন খারাপ বেশি হলেই একটা মাথা ধরার সমস্যা হয়। বুকের কাছটা চাপচাপ লাগে। অফিসের সবাইকে এড়িয়ে যায়। কারণ বাজে কথা বলতে ইচ্ছা করে না যদিও। তবুও বলেই ফেলে। ওটাই যেন ওর স্বভাব। কিন্তু স্বভাব না তো। তাই গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত একটা যন্ত্রণা নিয়ে সারাদিন কাটে। অম্বল অম্বল মনে হয়। বুকের কাছটা জ্বালা জ্বালা করে। অ্যান্টাসিড সব সময় ক্যারি করে। দিনে দুটো খাওয়াও হয়ে যায় কখনও সখনও। মনের ভিতরে সেদিন সারাদিন ধরে শারীরিক চিন্তা। শারীরিক অনুভূতিটাও যেন বেশি তখন। যত রাজ্যের নোংরা চিন্তা মাথার মধ্যে। কখন যে অজান্তেই বাথরুমের কমোডে বসে পড়েছে, সামনে স্মার্টফোনের স্ক্রীণ জুড়ে আদিরসের বন্যা বয়ে যাচ্ছে --- বুঝতেই পারে না। কিন্তু মাথার মধ্যে তখন একটা সাঁ সাঁ শব্দ। ওই শব্দটা চেনে রণিত। ওটা থামবে না। ওটা তাকে পুড়িয়ে বেরিয়ে যাবে। ক্লান্ত করে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, বুকের মধ্যে একটা হাপর পেটার আওয়াজ, একটা রণিত আরেকটা রণিতের দিকে তাকানো যেন ক্যালেণ্ডারের মত। একটা রণিত ক্যালেণ্ডারে বিঁধে হাওয়ায় দুলছে, আরেকটা রণিত তাতে দাগ বোলাচ্ছে।
পুরো পর্ন কোনোদিনই দেখেনি আজ অবধি যতদূর মনে পড়ে। মাঝপথেই প্রেশার কুকারের সিটি'র মত আচমকা হুড়কো বেগ। চরম মূহূর্তে মনটা অসম্ভব হালকা হয়ে যায়। কান্না পাওয়ার মত একটা ভালোবাসা বুক খামচিয়ে শেষ আশ্রয় দেয় তাকে। শরীর তখন অগ্ন্যুৎপাত করে করে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। সোনালী'র মুখটাই বেশি মনে পড়ে। সোনালী না কাবেরী? না দোলন না বিপাশা? রণিত চরম মুহূর্তেও শরীরটায় লাগাম টেনে বুঝতে চেষ্টা করেছে, কার ওপর তার রিয়েল ফিলিংসটা আসলে? বুঝতে পারে না। এর মধ্যে সত্যি সত্যি শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে একমাত্র কাবেরীর সাথে। তার আগের অফিসের কলিগ। তার প্রথম মেয়ে স্মোকার বন্ধু। তারা একটা বন্ধুদের গ্রুপ মিলে মন্দারমণি গিয়েছিল। তখন। পারেনি। প্রি ইজাকুলেশান হয়ে গিয়েছিল। কাবেরী তাকে জড়িয়ে ধরে সারা রাত প্রচুর আদর করে বলেছিল, ওরকম হয়, ডোন্ট টেক ইট সিরিয়াসলি। তবু কাবেরী নয়। তবে কি দোলন? বাকিরা তার কলেজের বন্ধু। দোলনের ডিভোর্স হয়ে গেছে। সোনালী একটু কনজারভেটিভ। তাও তার সাথে কথা বলে যদিও। তবুও খুব ফরম্যাল। বিপাশা বরং অনেক ওপেন। অনেক স্ট্রেট ফরোয়ার্ড। বিপাশাই প্রথম ওর সাথে সেক্স চ্যাট করে। রণিতের ভালো লাগেনি। কিন্তু একটা আকর্ষণ লেগেছিল কয়েকদিন। ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কয়েক রাত ঘুমও হয়নি। তাদের বাড়িতে বিরাট শিব মন্দির। মানত করেছিল প্রতি সোমবার সে নিরামিষ খাবে। এই পাপ সে আর করবে না। সে বছর চার আগের কথা। এখনও ও সোমবার করে নিরামিষ খায়। আর শনিবার রাতে বিপাশার সাথে সেক্স চ্যাট করে।
বেশ কয়েক মাস আগে বিপাশা বলছিল ওর মেয়েটা নাকি প্রবলেম করছে। স্মার্টফোন ঘাঁটা শিখে গেছে। বিপাশার কয়েকটা ন্যুড পিক দেখে ও ওর বাপিকে দেখিয়ে দেয়। যদিও বিপ্লব তখন ফুল লোডেড ছিল তাই কিছু বুঝতে পারেনি। পরের দিন বিপাশাকে জিজ্ঞাসা করে, মিস্টু কি দেখাচ্ছিল বল তো? তোমার একটা ন্যুড মনে হচ্ছে দেখেছিলাম? বিপাশা খিস্তি দেয়। ওরা কলেজ ফ্রেণ্ড। রেগে গেলে একে অপরকে খিস্তি দিয়েই কথা বলে, রণিতও অনেকবার ওভারহিয়ার করেছে ফোনে। বিপ্লবের বিরাট বিজনেস খড়গপুরে। বিপাশা সেখানেই থাকে। মেয়েটা নাকি রণিতের ছবি দেখে জানতে চেয়েছিল, সিরিয়ালে যেরকম দেখায় সেরকম একটা বয়ফ্রেণ্ড এই আঙ্কেল তোমার? বিপাশা এখন খুব কম ন্যুড পাঠায়।
মাঝে শুনেছিল অফিসের বিল্ডিং এক্সটেনশানের জন্য নাকি কৃষ্ণচূড়া গাছটা কাটা যাবে। রীতিমত নার্ভাস লাগছিল রণিতের। শুনেই বুকের ভিতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠেছিল। রাতে ঘুম আসছিল না। সে ভোররাতে ঠিক করে নিয়েছিল যদি তাই হয় তাহলে সে এই কোম্প্যানী ছেড়ে দেবে।ভোর রাতে উঠে একটা ললিত চালায় হরিপ্রসাদের। তারপর সাড়ে পাঁচটা'র সময় একটা ড্রাফট বানিয়ে মেলে সেভ করে রেখে দেয়। বিপাশা বলে, পাগলামী কোরো না।
রণিত আজ মোবাইলের চার্জারটা আনতে ভুলে গেছে। মোবাইল স্যুইচ অফ্ হয়ে পড়ে আছে বিকাল থেকেই। থাক। কয়েকদিন ধরে বিপাশার সাথে একটা ঝামেলা হচ্ছে কাবেরীকে নিয়ে। ফেসবুক থেকে কি করে কিছু একটা আঁচ পেয়েছে। শেষ কয়েক মাস কাবেরীর সাথে সেক্সটা একটা রিল্যক্সিং গেম হয়ে গেছে রণিতের। সেটা সে আর তুষারদা ছাড়া কেউ জানে না। তুষারদা তাদের আগের অফিসের কলিগ ছিল। এখন নিজেই একটা ট্রাভেলিং বিজনেস খুলেছে। দারুণ দাঁড়িয়ে গেছে। তুষারদা'র কানেকশান দারুণ। ওই হোটেল ঠিক করে দেয়। উইক এণ্ডে বা হাফ বেলায় কেস সেট্ করে চলে আসে। এটা একটা বিরাট ভেন্ট তার। এখন আর প্রি ইজাকুলেশান হয় না। কিন্তু ভালোবাসা বলতে যা বোঝায় তা নেই কাবেরীর সাথে। কাবেরী বলে, ভালোবাসা বলে কিছু হয় না, সব কাম। সবটাই একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং। একটা লাইফের বেঁচে থাকার স্ট্র্যাটেজি। রণিত কোথাও যেন একটু একটু বিশ্বাস করতে শুরু করেছে কথাটা। এখন বিন্দাস মিথ্যা বলে, আগের মত বুকটা ক্লাস টিচারের পড়া না করার মত করে না – ধুকপুক ধুকপুক। কাবেরী বলে সে নাকি গ্রোন আপ চাইল্ড এখন। কাবেরী শরীরে কি সহজ, কোনো আড়ষ্ঠতা নেই। সে বলে তোমরা পুরুষেরা ফোর-প্লে বোঝো না। শকুনের মত ঝাঁপানোর তাগিদে থাকো। ফোর-প্লে মেক ইট ইজি বেবি। কাবেরীকে দেখে সে ভাবে, কাবেরী তোমার বিবেক নেই? কাবেরী রণিতের উত্থিত পেনিসে হাত রেখে বলে, জীবনে এর চাইতে বড় সত্যই যেখানে নেই সেখানে বিবেক কোথা থেকে আসবে সোনা? ওটা ক্রেসে রেখে এসেছি, বাড়ি ফেরার সময় নিয়ে যাই রোজ। তারপর স্নান করিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখি বালিশের নীচে।
রণিত বাসে। বিধাননগর যাচ্ছে। প্রচণ্ড ঝড় উঠল। কোনোমতে বিধাননগর স্টেশানে পৌঁছে দেখে থিকথিক করছে ভিড়। টিটাগড়ে তার ছিঁড়েছে ওভারহেডে। রণিত বিপাশাকে কল করল। স্যুইচ অফ্। কাবেরীকে ফোন করল, কেটে দিল। “ওর সাথে একটা পার্টিতে এসেছি, পরে কল কোরো”।
প্রচণ্ড ঝড় উঠেছে। রণিতের কান্না পাচ্ছে। কৃষ্ণচূড়া গাছটার জন্য কান্না পাচ্ছে। প্রেম বলে কিছু নেই কাবেরী? তবে কৃষ্ণচূড়ার জন্য আমার এই বুকফাটা কান্না কেন? কাবেরী তুমি ভুল। তুমি অন্ধ। রণিতের চোখের কোলে জল। বৃষ্টি নামল।
ওই কৃষ্ণচূড়া গাছটাই যেন তার মনের কথা বুঝতে পারে। গাছটার সাথে তার একটা আত্মীয়তা গড়ে উঠেছে এতদিনে। অফিসের বাইরে মাঝে মাঝে চা খাওয়া কি একটা কোনো ছুতোতে বাইরে চলে আসে যখনই মন খারাপ লাগে। তার বাড়িতে কিন্তু কোনো কৃষ্ণচূড়া নেই। না তো তার বাড়ির আশেপাশে। তাদের হাইস্কুল মাঠে একটা ছিল। এখন আছে কিনা কে জানে। ওয়াটস অ্যাপে ওদের স্কুলের গ্রুপটায় একবার জিজ্ঞাসা করেছিল, তমালিকা বলেছিল আছে। তমালিকা'র বাড়ি স্কুলের কাছেই। বিয়ে হয়ে গেছে। রাণাঘাটে থাকে। ওর বর কিসে যেন একটা কাজ করে, বলে ও, কিন্তু মনে রাখতে পারে না। আসলে মনে রাখতে চায় না। রণিতের ইচ্ছা করে না। রণিত ভালোবাসত। কিন্তু সেটা কোনোদিন সম্পর্কে দাঁড়ায়নি। রণিতের সব সময় একটা ভয় ভয় করেছে। কি জানি কেন। রণিতের এখন ঈর্ষা হয় যখন তখন। কেন যেন অকারণই। তাই কি হয়? কিন্তু ওই অকারণ ঈর্ষা হওয়াটাকে ও মনে মনে উপভোগ করে।
রণিতের যেদিন কিচ্ছু ভালো লাগে না সেদিন দুপুরের খাওয়াটা স্কিপ করে যায়। ওর মন খারাপ বেশি হলেই একটা মাথা ধরার সমস্যা হয়। বুকের কাছটা চাপচাপ লাগে। অফিসের সবাইকে এড়িয়ে যায়। কারণ বাজে কথা বলতে ইচ্ছা করে না যদিও। তবুও বলেই ফেলে। ওটাই যেন ওর স্বভাব। কিন্তু স্বভাব না তো। তাই গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত একটা যন্ত্রণা নিয়ে সারাদিন কাটে। অম্বল অম্বল মনে হয়। বুকের কাছটা জ্বালা জ্বালা করে। অ্যান্টাসিড সব সময় ক্যারি করে। দিনে দুটো খাওয়াও হয়ে যায় কখনও সখনও। মনের ভিতরে সেদিন সারাদিন ধরে শারীরিক চিন্তা। শারীরিক অনুভূতিটাও যেন বেশি তখন। যত রাজ্যের নোংরা চিন্তা মাথার মধ্যে। কখন যে অজান্তেই বাথরুমের কমোডে বসে পড়েছে, সামনে স্মার্টফোনের স্ক্রীণ জুড়ে আদিরসের বন্যা বয়ে যাচ্ছে --- বুঝতেই পারে না। কিন্তু মাথার মধ্যে তখন একটা সাঁ সাঁ শব্দ। ওই শব্দটা চেনে রণিত। ওটা থামবে না। ওটা তাকে পুড়িয়ে বেরিয়ে যাবে। ক্লান্ত করে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, বুকের মধ্যে একটা হাপর পেটার আওয়াজ, একটা রণিত আরেকটা রণিতের দিকে তাকানো যেন ক্যালেণ্ডারের মত। একটা রণিত ক্যালেণ্ডারে বিঁধে হাওয়ায় দুলছে, আরেকটা রণিত তাতে দাগ বোলাচ্ছে।
পুরো পর্ন কোনোদিনই দেখেনি আজ অবধি যতদূর মনে পড়ে। মাঝপথেই প্রেশার কুকারের সিটি'র মত আচমকা হুড়কো বেগ। চরম মূহূর্তে মনটা অসম্ভব হালকা হয়ে যায়। কান্না পাওয়ার মত একটা ভালোবাসা বুক খামচিয়ে শেষ আশ্রয় দেয় তাকে। শরীর তখন অগ্ন্যুৎপাত করে করে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। সোনালী'র মুখটাই বেশি মনে পড়ে। সোনালী না কাবেরী? না দোলন না বিপাশা? রণিত চরম মুহূর্তেও শরীরটায় লাগাম টেনে বুঝতে চেষ্টা করেছে, কার ওপর তার রিয়েল ফিলিংসটা আসলে? বুঝতে পারে না। এর মধ্যে সত্যি সত্যি শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে একমাত্র কাবেরীর সাথে। তার আগের অফিসের কলিগ। তার প্রথম মেয়ে স্মোকার বন্ধু। তারা একটা বন্ধুদের গ্রুপ মিলে মন্দারমণি গিয়েছিল। তখন। পারেনি। প্রি ইজাকুলেশান হয়ে গিয়েছিল। কাবেরী তাকে জড়িয়ে ধরে সারা রাত প্রচুর আদর করে বলেছিল, ওরকম হয়, ডোন্ট টেক ইট সিরিয়াসলি। তবু কাবেরী নয়। তবে কি দোলন? বাকিরা তার কলেজের বন্ধু। দোলনের ডিভোর্স হয়ে গেছে। সোনালী একটু কনজারভেটিভ। তাও তার সাথে কথা বলে যদিও। তবুও খুব ফরম্যাল। বিপাশা বরং অনেক ওপেন। অনেক স্ট্রেট ফরোয়ার্ড। বিপাশাই প্রথম ওর সাথে সেক্স চ্যাট করে। রণিতের ভালো লাগেনি। কিন্তু একটা আকর্ষণ লেগেছিল কয়েকদিন। ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কয়েক রাত ঘুমও হয়নি। তাদের বাড়িতে বিরাট শিব মন্দির। মানত করেছিল প্রতি সোমবার সে নিরামিষ খাবে। এই পাপ সে আর করবে না। সে বছর চার আগের কথা। এখনও ও সোমবার করে নিরামিষ খায়। আর শনিবার রাতে বিপাশার সাথে সেক্স চ্যাট করে।
বেশ কয়েক মাস আগে বিপাশা বলছিল ওর মেয়েটা নাকি প্রবলেম করছে। স্মার্টফোন ঘাঁটা শিখে গেছে। বিপাশার কয়েকটা ন্যুড পিক দেখে ও ওর বাপিকে দেখিয়ে দেয়। যদিও বিপ্লব তখন ফুল লোডেড ছিল তাই কিছু বুঝতে পারেনি। পরের দিন বিপাশাকে জিজ্ঞাসা করে, মিস্টু কি দেখাচ্ছিল বল তো? তোমার একটা ন্যুড মনে হচ্ছে দেখেছিলাম? বিপাশা খিস্তি দেয়। ওরা কলেজ ফ্রেণ্ড। রেগে গেলে একে অপরকে খিস্তি দিয়েই কথা বলে, রণিতও অনেকবার ওভারহিয়ার করেছে ফোনে। বিপ্লবের বিরাট বিজনেস খড়গপুরে। বিপাশা সেখানেই থাকে। মেয়েটা নাকি রণিতের ছবি দেখে জানতে চেয়েছিল, সিরিয়ালে যেরকম দেখায় সেরকম একটা বয়ফ্রেণ্ড এই আঙ্কেল তোমার? বিপাশা এখন খুব কম ন্যুড পাঠায়।
মাঝে শুনেছিল অফিসের বিল্ডিং এক্সটেনশানের জন্য নাকি কৃষ্ণচূড়া গাছটা কাটা যাবে। রীতিমত নার্ভাস লাগছিল রণিতের। শুনেই বুকের ভিতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠেছিল। রাতে ঘুম আসছিল না। সে ভোররাতে ঠিক করে নিয়েছিল যদি তাই হয় তাহলে সে এই কোম্প্যানী ছেড়ে দেবে।ভোর রাতে উঠে একটা ললিত চালায় হরিপ্রসাদের। তারপর সাড়ে পাঁচটা'র সময় একটা ড্রাফট বানিয়ে মেলে সেভ করে রেখে দেয়। বিপাশা বলে, পাগলামী কোরো না।
রণিত আজ মোবাইলের চার্জারটা আনতে ভুলে গেছে। মোবাইল স্যুইচ অফ্ হয়ে পড়ে আছে বিকাল থেকেই। থাক। কয়েকদিন ধরে বিপাশার সাথে একটা ঝামেলা হচ্ছে কাবেরীকে নিয়ে। ফেসবুক থেকে কি করে কিছু একটা আঁচ পেয়েছে। শেষ কয়েক মাস কাবেরীর সাথে সেক্সটা একটা রিল্যক্সিং গেম হয়ে গেছে রণিতের। সেটা সে আর তুষারদা ছাড়া কেউ জানে না। তুষারদা তাদের আগের অফিসের কলিগ ছিল। এখন নিজেই একটা ট্রাভেলিং বিজনেস খুলেছে। দারুণ দাঁড়িয়ে গেছে। তুষারদা'র কানেকশান দারুণ। ওই হোটেল ঠিক করে দেয়। উইক এণ্ডে বা হাফ বেলায় কেস সেট্ করে চলে আসে। এটা একটা বিরাট ভেন্ট তার। এখন আর প্রি ইজাকুলেশান হয় না। কিন্তু ভালোবাসা বলতে যা বোঝায় তা নেই কাবেরীর সাথে। কাবেরী বলে, ভালোবাসা বলে কিছু হয় না, সব কাম। সবটাই একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং। একটা লাইফের বেঁচে থাকার স্ট্র্যাটেজি। রণিত কোথাও যেন একটু একটু বিশ্বাস করতে শুরু করেছে কথাটা। এখন বিন্দাস মিথ্যা বলে, আগের মত বুকটা ক্লাস টিচারের পড়া না করার মত করে না – ধুকপুক ধুকপুক। কাবেরী বলে সে নাকি গ্রোন আপ চাইল্ড এখন। কাবেরী শরীরে কি সহজ, কোনো আড়ষ্ঠতা নেই। সে বলে তোমরা পুরুষেরা ফোর-প্লে বোঝো না। শকুনের মত ঝাঁপানোর তাগিদে থাকো। ফোর-প্লে মেক ইট ইজি বেবি। কাবেরীকে দেখে সে ভাবে, কাবেরী তোমার বিবেক নেই? কাবেরী রণিতের উত্থিত পেনিসে হাত রেখে বলে, জীবনে এর চাইতে বড় সত্যই যেখানে নেই সেখানে বিবেক কোথা থেকে আসবে সোনা? ওটা ক্রেসে রেখে এসেছি, বাড়ি ফেরার সময় নিয়ে যাই রোজ। তারপর স্নান করিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখি বালিশের নীচে।
রণিত বাসে। বিধাননগর যাচ্ছে। প্রচণ্ড ঝড় উঠল। কোনোমতে বিধাননগর স্টেশানে পৌঁছে দেখে থিকথিক করছে ভিড়। টিটাগড়ে তার ছিঁড়েছে ওভারহেডে। রণিত বিপাশাকে কল করল। স্যুইচ অফ্। কাবেরীকে ফোন করল, কেটে দিল। “ওর সাথে একটা পার্টিতে এসেছি, পরে কল কোরো”।
প্রচণ্ড ঝড় উঠেছে। রণিতের কান্না পাচ্ছে। কৃষ্ণচূড়া গাছটার জন্য কান্না পাচ্ছে। প্রেম বলে কিছু নেই কাবেরী? তবে কৃষ্ণচূড়ার জন্য আমার এই বুকফাটা কান্না কেন? কাবেরী তুমি ভুল। তুমি অন্ধ। রণিতের চোখের কোলে জল। বৃষ্টি নামল।
কাবেরীর ফোন। ফোন করেছিলে?... আসবে? ফিরতে পারোনি তো? চলে এসো, আমি গড়িয়ার ফ্ল্যাটেই আছি।
কৃষ্ণচূড়াই তার একমাত্র আত্মীয় কলকাতায়। প্রেমহীন কলকাতায়। প্রেম নেই। প্রেম মানে কাম। তবু কান্না কেন কাবেরী?
কৃষ্ণচূড়াই তার একমাত্র আত্মীয় কলকাতায়। প্রেমহীন কলকাতায়। প্রেম নেই। প্রেম মানে কাম। তবু কান্না কেন কাবেরী?