ধর্মানুগামী, ধর্মদ্বেষী, ধর্মনিরপেক্ষ এবং ধর্মোন্মাদ।
ধর্মানুগামী – সাধারণত শান্তিপ্রিয়। খুব ঝুটঝামেলায় যাওয়া পছন্দ করেন না, অন্যের বিশ্বাসের সাথে সহমত না হলেও তীব্র বিদ্বেষ ইত্যাদি পোষণ করেন না। নিজের ও নিজের প্রিয়জনের সুখ-শান্তি-নির্বিঘ্ন জীবনের বাইরে বেশি কিছু চাওয়ার নেই। ধর্মের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম তর্কে, আলোচনায় মাথা ঘামান না।
ধর্মদ্বেষী – সমস্যার। এনারা হয় বিজ্ঞান অথবা নাস্তিকবাদকে একমাত্র সত্যজ্ঞান করেন। এদের অনেকের ধারণা বিজ্ঞান সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। মানুষের বৌদ্ধিক সত্তার উপর এদের ঝোঁক অনেক বেশি। সমস্ত জগৎ যুক্তিবাদী এবং নাস্তিক হয়ে উঠুক, এরকম একটা টোটালাট্যারিয়ান আদর্শের ভাব পোষণ করেন। স্বাভাবিকভাবেই ধর্ম প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়, ফলত একটা বিদ্বেষভাব জন্মে যায়।
ধর্মনিরপেক্ষ – কোনো ধর্মেরই অলৌকিক, অতিলৌকিক তত্ত্বে বিশ্বাস করেন না। কিন্তু ধর্মের অস্তিত্ব স্বীকার করেন মানব সভ্যতায়। ধর্মের ইতিহাস, সমাজে তার প্রভাব ইত্যাদি নিয়ে সচেতন। কিন্তু নিজের ভাবনাকে স্বাধীন রাখেন, যুক্তি আর আবেগের একটা সামঞ্জস্য এ ধরণের চরিত্রে দেখা যায়। কোনোভাবেই টোটালাট্যারিয়ান নন। বলেন, আমি হয় তো বিশ্বাস করি না, কিন্তু অনেকে করেন। মানব সভ্যতার ইতিহাসে ধর্মের অধ্যায় বাদ দেওয়া যায় না।
ধর্মোন্মাদ – এ এক বিশেষ ধরণের আসক্তি। একটা বিশেষ মতের, তত্ত্বের সমস্তকে ধ্রুবসত্য বলে গ্রহণ করা। এবং সেই ধাঁচে নিজের সমস্ত অস্তিত্বকে জড়িয়ে ফেলা। ফলত সেই বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যা কিছু তা তার অস্তিত্বের সংকট, একটা থ্রেট। সমস্ত জগত কেন তার এই ধ্রুব বিশ্বাসের পথে হাঁটছে না – এ তার একটা গভীর ক্ষোভ, রাগ। এই স্তরের মানুষ সব সময় রাজনীতির খুব একটা বড় স্তম্ভ, অবশ্যই বিশেষ ধরণের রাজনীতির।
সমস্যা হল ধর্মবিদ্বেষ ও ধর্মোন্মাদ নিয়ে।
তবে শেষ এক ধাপ আছে। ভীষণ অল্প সংখ্যক। ধর্ম অন্বেষী। এরা খোঁজেন। ধর্ম কি? এখানে ধর্ম মানে মিস্টিক কিছু না। এখানে ধর্ম মানে এথিক্স। নীতি। সে নীতি যদি মিস্টিসিজম নির্ভর হয়, তবু তা নীতি।
মূল কথা হচ্ছে রামকৃষ্ণের ভাষায় - জগতসংসার বালিতে চিনিতে মেশানো - বালি সরিয়ে চিনিটা নিতে হবে।
চোখে বালি ছুঁড়ে বেশিদিন চলে না - এটা বুঝতে হবে।