Skip to main content
 
এখন আমাদের প্রচণ্ড কৌতুহল।
 
       কেন মারা গেল? কেন গলায় দড়ি দিল? ঠিক কি কি খেয়েছিল? ক'বার হিশু করতে গিয়েছিল? হিশুর রঙ কি ছিল? ফ্লাশ করেছিল কোন হাতে? দড়ি না চাদর? কোন কোম্পানির চাদর? রঙ কি ছিল? দাড়ি কেটেছিল? শুনেছি গলায় দড়ি দিলে নাকি বীর্য বেরিয়ে আসে, পাজামায় দাগ ছিল? ওটাও নাকি লম্বা হয়ে যায়, হুমায়ুন আহমেদের গল্পে পড়েছি, হয়েছিল? আচ্ছা যে যে মেয়েগুলোর সাথে সম্পর্ক ছিল। তাদের সাথে শুতো নিশ্চয়। কি যা তা না? এতগুলো মেয়ে, পর পর। কারোর সাথেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারত না? কেন? কোনো গোলমাল ছিল? আচ্ছা সিনেমা ফ্লপ হচ্ছিল বলে? আচ্ছা সত্যিই কি ফ্লপ হচ্ছিল? বড্ড উঁচুতে উঠেছিল কিন্তু। আমার ঈর্ষা হত, মাইরি বলছি। কি দেখতে, কি কেরিয়ার, কি টাকা না? আর আমায় দেখো। আমি সত্যি বলতে কোথাও একটু সুখও পাচ্ছি জানো। মানে, আমি যদি কষ্টে থাকি তুমিই বা থাকবে না কেন? না, তা বলে আত্মহত্যা সমর্থন করি না। তবে আমার লুজার লুজার ফিলিংসটায় একটা শান্তির প্রলেপ পড়েছে কোথাও জানো। 'দেখ কেমন লাগে' মতন ফিলিংস। আরে ওরকম মরে যাওয়ার মত ডিপ্রেশান আমার হামেশাই হয়। তাই বলে মরি? আরে তোমাদের অনেক লোভ তাই তোমাদের এত অবসাদ। আমরা এরকম হাজার একটা ঝঞ্জাট বাঁহাতে সামলে দিই। আরে ওরকম ফিগার, ওরকম দেখতে, এত ট্যালেন্ট, বাব্বা! এগুলোর সিকির সিকিভাগ থাকলে আমি দেখিয়ে দিতাম কি করে বাঁচতে হয়। আদিখ্যেতা যত। সব শৌখিন শোক মাইরি। আরে মরে যাওয়ার হাজার একটা কারণ ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ছিল, মানে যে অবস্থায় ওরা বেঁচে আছে। আরে আমাদের দেশের একটা বড় অংশের মানুষ ওসব অবসাদের শৌখিন শোক হয় না। আর একান্তভাবে আত্মহত্যা করলেও ন্যায্য কারণ থাকে। যেমন ঋণ চুকাতে না পেরে। ধর্ষিতা হয়ে মুখ দেখাতে না পেরে। এই সব আর কি। ওরকম বড়লোকি অবসাদের খেলা আমাদের হওয়ার সময় কই রে বাবা? কি বললেন, এটা একটা রোগ? তা হবে, কিন্তু ওইসব নিয়ে বসে থাকলে আমাদের চলে বলুন? শুনেছেন কোনো ভিখারি অবসাদে গলায় দড়ি দিয়েছে, লাইনে শুয়েছে? শালা ভরা পেট কি জিনিস না জেনেই সারাটা জীবন শিয়ালদায় কাটিয়ে দিল এমন মানুষের সংখ্যা কম? তারপর সময় এল যখন টুক করে মরে গেল। হয় না? কি? হয় তো? তবে? ওসব বড়লোকদের শৌখিন রোগ মশায়। টাকার চিন্তা নাই, তাই মনের মধ্যে হাজার একটা প্যাঁচ।
 
      যাক গে? সেই কাদম্বরীদেবী আত্মহত্যা থেকে নেতাজী অন্তর্ধান - এই সব জট আমরা ছাড়াতে পেরিচি? পারিনি তো? এই আরেকটা যোগ হল। এখন আমি করোনায় মৃতের সংখ্যা গুনব? আক্রান্ত গুনব? হাতে মিনিটে মিনিটে সাবান দেব? মনে করে সকালে উঠে অ্যান্টি করোনা হোমিওপ্যাথি খাব? না এই সব খোঁজ রাখব, বলুন তো? কিন্তু রাখতে তো হবেই। সব চ্যানেল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। আমি এখন দিনের কয়েক ঘন্টা ওর ফ্ল্যাটেই কাটাই তো। চাদর উল্টিয়ে দেখি, ডাস্টবিন উপুড় করে দেখি, রান্নাঘরের সব কৌটো খুলে খুলে দেখি, কল লগ চেক করি, সমস্ত আলমারি হাজারবার সব কিছু নামিয়ে চেক করা হয়ে গেছে। ক্লু আমায় পেতেই হবে। যে যত ঘাঁটিয়ে নিউজ দেবে আমি সেই নিউজ চ্যানেলের। আমি জানব না তো কে জানবে?
 
 
(কি বিশ্রী ঘিনঘিনে কৌতুহল না আমাদের? একজন মানুষ যে কারণেই হোক যদি মৃত্যুকে বেছে নিয়েছেন, আমাদের কি অধিকার সেই সিদ্ধান্তকে এত খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে স্টোরি বানিয়ে রগরগে করে প্রকাশ করার? সে তো একটা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। যদি এটা আত্মহত্যাই হয়ে থাকে, যে কারণেই হোক, যদি তিনি সেটার কারণ জানানোর দরকার না মনে করে থাকেন, কেন আমরা এমন অনধিকার চর্চা করে যাব? সে নেই বলে তার সমস্ত ব্যক্তিগত জীবনটাকে বাজারে নিয়ে নিলাম হাঁকব? কেন কোথাও একটা সীমারেখা টানা যাবে না? শোক থাকবে স্বাভাবিক। কিন্তু কৌতুহলের এই আতিশয্য কি স্বাভাবিক? মনে হয় না। বড্ড অমানবিক হয়ে যাচ্ছি আমরা। বিশেষ করে আমাদের ঘৃণ্য সংবাদ মাধ্যমগুলো। যারা আমাদের শকুনের মত চাহিদার জন্য পচাবাসী মাংসের ব্যবস্থা করে যাচ্ছে। এটা কোথাও তো থামা উচিৎ।)