Skip to main content
 
গাছের তলাটা ঘন অন্ধকার। দু'জন বসে থাকা মানুষের অবয়ব অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
দুই দল মানুষ হইহই করে তাদের কাছে গিয়ে পড়ল। একদল জিজ্ঞাসা করল, কে হিন্দু?
আরেকদল হুঙ্কার দিল, কে মুসলমান?
একজন বলল, আমি হিন্দুরে শালা, আমি রামকৃষ্ণ।
আরেকজন বলল, আমি মুসলমান, আমি লালন।
দুই দলই গগনভেদ করে বলে উঠল, কাটো কাটো...
রামকৃষ্ণ উঠে দাঁড়ালেন তার উদ্যত হত্যাকারীর সামনে, বললেন, কাটো, তবে তুমি কি নামে ঈশ্বরকে ডাকো?
সে বলল, আল্লাহ্
রামকৃষ্ণ বললেন, তবে এক কাজ করো, একবার আমায় আলিঙ্গন করো, আমায় আল্লাহ্'র নাম শোনাও, তারপর হত্যা করো আমায়।
সে বলল, আল্লার নাম শুনবে? কেন?
রামকৃষ্ণ বললেন, শুদ্ধ হব। দেহ-মন শুদ্ধ হবে।
লালন তার সামনে উদ্যত খড়গ হাতে মানুষটাকেও বললেন একই কথা, আমায় মারো, তবে মারার আগে একবার আমায় আলিঙ্গন করে বলো - রাম, শুদ্ধ হব।
দুই দলের প্রধান দুই মানুষ এ-ওর মুখ চেয়ে, লালন আর রামকৃষ্ণের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমাদের দু'জনের কাছে রাম আর রহিমে কোনো ভেদ নেই বলতে চাও?
না
কিন্তু আমার কোরাণ ওর গীতা....
সুপ্ত বীজ, তা মাটিতে রোপণ করোনি, জল দাও নি, যদি দিতে, দেখতে একই গাছ, একই ফল, একই ফুল।
কোথায় পাব মাটি, কোথায় পাব জল?
পিছন থেকে একজন ডাকল, হাতে লাঠি, শীর্ণ শরীর, খালি পা, চোখে দুই চশমার কাঁচে যেন রাতের আকাশের সব তারা ভেসে আছে। সে বলল, তোমার দেখা দরিদ্রতম মানুষটার কাছে যাও। জিজ্ঞাসা করো, সে মুসলমান না হিন্দু? সে মন্দির চায় না মসজিদ? সে কোরাণ পড়ে না গীতা? যদি সে কথা বলতে পারে, তবে তার যা দরকার তাই আমাদের সবার দরকার, সেই ধর্ম। বাকিটুকু মিথ্যা। তার সামনে তার মত হয়ে দাঁড়াও, দেখো মাথাটা নীচু হতে হতে যার পায়ে ঠেকবে তাকে আলাদা করে চিনতে পারো কি না, সে রাম না রহিম?