ভারতের মত দেশে, যেখানে এখনও জন্মের আগে লিঙ্গ পরীক্ষা নিষিদ্ধ, অবশ্যই কারণটা সবার জানা, কন্যাভ্রুণ হত্যা যাতে না হয় সেই জন্যে, সেইখানে আজকের এই Daughter's day বা কন্যাদিবস উদযাপন আমার দারুণ লাগল। খুব খুব খুব ভালো লাগল। অনেকেই তাদের টাইমলাইনে নিজের মেয়ের সঙ্গে ছবি দিচ্ছেন। দিন দিন। আমার একটুও আদিখ্যেতা লাগছে না, আমার একটুও মনে হচ্ছে না বাড়াবাড়ি, ন্যাকামি ইত্যাদি ইত্যাদি যা নিন্দুকেরা, অতি-শুদ্ধতাবাগীশেরা বলে থাকেন। যে দেশে এখনও একজন মেয়েকে জন্মানোর আগে নিজের পরিচয় গোপন রেখে আড়ালে জন্মাতে হয় সেখানে এই দিনটার উদযাপন খুব দরকার। ছবিগুলো দেখে খুব আনন্দিত হচ্ছি। ভীষণ ভালো লাগছে। যাদের চিনি সবার ছবিতে গিয়ে রিয়্যাক্ট করে আসছি, আর যাদের সরাসরি চিনি না, মানে আমার বন্ধুতালিকায় থাকলেও কোনোদিন কথা হয়নি, তাদের ছবি দেখেও আনন্দিত হচ্ছি নীরবে। সে কথাটাও জানিয়ে রাখলাম।
সবার সব আদুরে কন্যাদের জন্য রইল আমার অনেক অনেক আন্তরিক ভালোবাসা, শুভেচ্ছা। এই দিনটা এমনই গর্বের সঙ্গে ফিরে ফিরে আসুক। প্রতি বছর। একদিন এই লজ্জাজনক আইনটা অবলুপ্ত হোক, অপ্রয়োজনীয় হোক।
আমি একটা গল্প দিয়ে শেষ করি। হরিদ্বারে আমার দিদি-বোনের মেয়েদের জন্য সোয়েটার কিনতে গেছি। অনেক সকাল, সব দোকান খোলেনি তখনও। কিন্তু আমরা বেরিয়ে যাব একটু পর, তাই আমার হাতে সময় নেই, তখনই কিনতে হবে আমায়।
একটা দোকান সদ্য খুলছে। দাঁড়ালাম। দোকানের মালিক, কর্মচারী ইশারায় আমায় বসতে বললেন। মালিক ধুপ দেখিয়ে পুজো দিলেন, তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, কি চাই?
আমি আমার দিদি আর বোনের মেয়েদের বয়েস বললাম, উনি সোয়েটার বার করে দিলেন। নির্ধারিত মূল্য দিলাম। উনি বেশ কিছুটা অংশ আমার হাতে ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, আমার দোকান খোলা হতেই দুই মা লক্ষ্মীর জন্য জিনিস কেনা হল, এটা অনুগ্রহ করে আপনি রাখুন। আজ খুব শুভদিন আমার। কর্মচারীরাও মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।
কথা তো শব্দ বা শ্বাস বলে না, কথা বলে মানুষ। তার বিশ্বাস, তার অনুভব। সেই কথাগুলো বলার অদ্ভুত সারল্যে আমার মন প্রফুল্ল হয়ে গেল। কোথাও কোনো ভান বা অন্যকিছুর লেশমাত্র আভাস পেলাম না।
আজ তাই নিজের আনন্দটা জানাতে গিয়ে এই গল্পটা মনে পড়ল। সবাই ভালো থাকুন। এই ভাবনার আরো প্রসার হোক। আরো আলো আসুক। আরো বাতাস আসুক। এই প্রার্থনা।