স্বপন চন্দ্রার গা ধুইয়ে, পাশ ফিরিয়ে শুইয়ে, নাইনে পড়া ছেলেটার মাষ্টার আসা অবধি অপেক্ষা করে, বেরিয়ে আসে সাইকেল নিয়ে।
কাকলি ছোলাসেদ্ধ নিয়ে গঙ্গার ধারে মাঠের একটা কোণে অন্ধকারে বসে থাকে। ওর সাইকেলটা মাঠে শোয়ানো থাকে। ক্লান্ত পশুর মত।
স্বপন পাশে এসে বসে। কাকলি ছোলাসেদ্ধ টিফিন কৌটটা ঢাকনা খুলে এগিয়ে দেয়। স্বপন গঙ্গার হাওয়ায়, কাকলির গায়ের গন্ধে জুড়ায়।
কিছু মানুষের সঙ্গে সব কথা বলা হয়ে যাওয়ার পর দেখা হয়। কাকলি তেমন মানুষ। চন্দ্রা বাঁচবে না। আর হয় তো দু বছর। কাকলি বোঝে। ওর স্বামী, রতন নেই। বছর আট হল। কাকলি জানে কাছের মানুষ কতটা শূন্য করে যায়। ভাষা বোঝে না অতটা শূন্যতার মানে কী। তাই বোঝাতে পারে না। কাকলি বোঝে।
শরীর আসেনি কোনোদিন? জাগেনি? জেগেছে। দুজনেই বিশ্বাস করেনি। অত ক্ষণস্থায়ীতায় প্রাণ সাড়া দেয় না। এই সন্ধ্যেগুলোকে তিতা করতে চায় না। মিষ্টত্ব খোঁজার নেই জীবনে আর। এখন সাদা বাতাসের মত শান্ত শান্তি ছাড়া আর কী সত্যি লাগে? কিচ্ছু না।
ন'টা নাগাদ দুজনেই ফিরে যায়। স্বপন রান্না চাপায়। চন্দ্রাকে খাইয়ে ছেলের সঙ্গে খেতে বসে। তারপর শুতে যায় মোবাইলটা মাথার কাছে নিয়ে। কাকলি বালিশে মাথা রেখে লেখে, শুভরাত্রি।
স্বপন উত্তর দেয়। ঘুমিয়ে পড়ে।
কোনো কোনো মানুষের সঙ্গে সব প্রয়োজন ফুরাবার পর দেখা হয়। সমস্ত অস্তিত্বে মিশে সে বলে, আছিই তো।
তবু সংসার নোংরা কথা বলে। কাকলি, স্বপন জানে। কিন্তু তবু ঘুম আসে। তবু রোজ সন্ধ্যেতে গঙ্গার ধারে জুড়াতে যেতে যাওয়া লাগে। অসুবিধা হয় না তো।