একটা নিভৃত ঘর থাকুক সব ঘরের উপরে, ছাদে, যেখানে আধপেটা খেয়ে এসেও শান্তি পাওয়া যায়। মন বাচ্চা ছেলের মত জানলায় এসে দাঁড়াক। তারা দেখুক। বৃষ্টির শব্দ শুনুক। সব কিছু দেখতে দেখতে নিজেকে মনে হোক কি ভীষণ সামান্য।
অপমানের স্মৃতি, অবহেলার স্মৃতি সব বোঁচকা বেঁধে, ময়লা ফেলা মানুষটার মত আমার জানলার নীচে এসে দাঁড়াক, জিজ্ঞাসা করুক মাথা তুলে আমার দিকে, কিছু লাগবে এর মধ্যে থেকে? দেখে নাও না নীচে নেমে একবার… যদি কিছু লাগে…
আমি হাত নেড়ে বলব, ওসব বাসি হয়ে গেছে, ফেলে দাও… ও নিয়ে আমি কি করব আর… আমি নীচে নামব না এখন….
তারপর সে ঘরে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ি। একা একা ভাবি। আমার মনের মত করে কি জগতে সব ঘটবে? না তো। আমি কি গোটাগুটি জগতটা যেমন চায় হতে পারব? না তো। তবে? তবে আমি কি করব? কি দায়িত্ব আমার? কি কর্তব্য?
কর্তব্য বাঁধে না। রাস্তা দেখিয়ে দেয় বেরিয়ে যাওয়ার। কাজ মিটে গেলেই। বেরিয়ে যাব। শান্ত হয়েই। যদি বোঁচকা দেয়, বলব থাক। যদি পুরষ্কার দেয়, বলব থাক। যদি বলে তুমি ভালো না, বলব, আচ্ছা। যদি বলে তুমি খুব ভালো, বলব, আচ্ছা। আমি যাই। আমি এই সব বলতে বলতে বেরিয়ে যাওয়ার রাস্তাটা খুঁজব। পেয়েই যাব। ফিরে তাকাব না। ওই বিয়ে বাড়িতে যারা খাবার সার্ভ করে তাদের মত। কাজ শেষে সবাই মত্ত হয়ে যায়, আর মনেই রাখে না কে ভালো সার্ভ করল, কে করল না… সেরকম আরকি।
বেরিয়ে এসে একটা ফাঁকা রাস্তায় দাঁড়াব। একপাশে। রাস্তা আটকে না। কেউ হাসলে, হাসব। কেউ ভুরু কুঁচকালে, ভুরু কুঁচকাবো। কেউ গায়ে হাত দিতে এলে, হাতের পেশী শক্ত করব, মুচড়ে দেব না, সরিয়ে দেব সবটুকু শক্তি দিয়ে। রক্তচক্ষুতে বুঝিয়ে দেব, সীমার মধ্যে থেকো। আমি পারব, কারণ আমার জেতার নেই, আমার নিজেকে জড়ানোর নেই, শুধু নিজেকে নিয়ে নিজের সঙ্গে থাকার আছে। কেউ সেখানে মাথা গলাতে এলে মাথাটা ধরে বার দেব। বলব, মাফ করো, শুধু মাথাটা গলাতে এলে যাও, যদি হৃদয়টা বাইরে রেখে আসো। যদি সহৃদয় আসো, এসো।
তারপর আবার আমার ঘরে ফিরে আসব। যদি ঈশ্বর দৈবাৎ সামনে এসে দাঁড়ান চাঁদের আলোর মত ঘরে? বলব কিছু? না, বলব চুপটি করে বসো।
কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে সুখী আমি?
আমি বলব, আমি সুখ আর দুঃখ কাউকেই ঘর ভাড়া দিই না। ভাড়াও গুনি না। তারা এমনিই আসে, থাকে, যায়। আমি ওদের ঘাঁটাই না।
তবে আমি কি?
কিচ্ছু না।