সৌরভ ভট্টাচার্য
8 April 2020
সবাই ফোনে বলল, ছাদে উঠলেই আকাশে গোল্লা চাঁদ। উঠলাম। বেশ বাতাস দিচ্ছে। জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে চারদিক। হঠাৎ টুক করে শব্দ। কি হল, ছাদে তো কেউ নেই এখন। সিঁড়ির ঘরের থেকে আলো ছাদে এসে পড়েছে। কেউ কি উঠল? না তো।
কিছুটা অন্যমনস্ক হয়েছি। আবার আওয়াজ। ছাদের উল্টোদিক থেকে। কেউ দেওয়াল বেয়ে উঠেছে?
কেউ নেই। একটা ফাঁকা টিনের কৌটো। কে এনে রাখল রে বাবা। ঝুঁকে তুলতে যাব, হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন বলল, আমায় দিয়ে দেন, ওটা আমার।
পিছন ফিরে দেখি পাশের বাড়ির ছাদে ঢ্যাঙা রোগা একটা লোক। মুখটা বোঝা যাচ্ছে না।
বললাম, টিনটা ছুঁড়ে ছিলেন কেন?
সে বলল, ছুঁড়ি নি তো, লোফালুফি খেলছিলাম।
বললাম, কার সাথে?
সে বাঁশের মত হাতটা লম্বা করে সরু বেতের মত আঙুলটা পিছনের সুপুরি গাছটার দিকে দেখিয়ে দিল।
ধাঁ করে ঘুরে দেখি আরেকটা রোগা মত লোক গাছটাকে পেঁচিয়ে বসে আছে, আমার দিকে তাকিয়ে।
বললাম, তোমরা কারা, এ পাড়ায় কবে এলে?
ছাদের লোকটা বলল, আজ্ঞে আমরা ভূত, এই পাড়াতেই থাকি, হাওয়ায় মিশে। আপনি যখন হাবিজাবি লেখেন, আপনার টেবিলের চারপাশেই ঘুরঘুর করি, আপনি ঘুমালে মশারির উপর দোল খাই। যেখানেই দেখবেন বিপরীতমুখী বাতাস সেখানেই আমরা।
বললাম, আমার কি ভয় পাওয়া উচিৎ? মানে আমার কি এখন প্রাণ সংশয়?
গাছের জন বলল, বালাইষাট, অমন ধারা ভূত আমরা নইকো। আপনি আমাদের সাথে লোফালুফি খেলবেন?
আমি বললাম, না তো, আমি চাঁদ দেখতে এসেছিলাম।
ছাদের জন বলল, তা বেড়ে রঙটা খুলেছে না?
অমনি গাছের জন ঝুপ করে আমার পাশে এসে লাফিয়ে পড়ে বলল, আপনি চাঁদ নিয়ে গান জানেন?
আমি বললাম, জানি, কিন্তু গাইব না। ভাল্লাগছে না। ভয়ে হিসি পাচ্ছে।
অমনি সে দু হাত পিছিয়ে গিয়ে বলল, ম্যাগো, ওমা এ যে হিসি করবে বলছে এখন! ছিছি!
ছাদের জন বলল, করবে না। ভয় নেই। আমি আছি না।
আমি বললাম, কি অসভ্য ভূত আপনি, "আমি আছি না" মানে কি?
সে বলল ও কিছু নয়, আমার গান শুনে আজ অবধি কেউ... সে যাক
এই বলে সে, লম্বা পা ফেলে আমার আরেক পাশে এসে বলল, আমি গাই?
আমার হ্যাঁ বা না বলার অপেক্ষা না করেই শুরু করে দিল, ও চাঁদ কামড়ে রেখো জোছোনাকে।
আমি একবার ভাবলাম বলি, দাদা ওটা সামলে হবে। সাহস হল না। ভূতের সাথে তক্কে গিয়ে লাভ কি?
খানিক বাদে দেখি এ ছাদ সে ছাদ থেকে পিলপিল করে নানা সাইজের ভুত নামছে। কি আমোদ তাদের গান শুনে। একজন আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে গেল, লকডাউন চলছে না তোদের?
বললাম, হুম।
সে বলল, হেব্বি কেস খেয়েছিস তোরা, ব্ড্ড বাড়াবাড়ি করছিলি কিন্তু না?
চুপ করে থাকলাম। তোমরাই বা কি কমাকমি কচ্ছ বাবা, একটা নিরীহ চাঁদপ্রেমী মানুষকে ঘিরে ভূতের কেত্তন লাগিয়েছ।
সে আমার আরো কাছে এগিয়ে এসে বলল, যদি টপকে যাস সোজা আমার কাছে চলে আসবি। ডিসকাউন্ট চলছে, ভালো গাছ দেখে দেব। তুই তো আবার ছাইভস্ম কি সব লিখিস রাতদিন, একটু ফাঁকা দেখে জায়গা দেব, দেখবি কি ঝাক্কাস লেখা আসছে।
বললাম, আমার ইয়ে পেয়েছে, নীচে যাব।
সে বলল, যা।
নামতে যাচ্ছি, হঠাৎ আমার ঘাড় চেপে ধরল। ভাবলাম নিশ্চয় মন পাল্টেছে, মটকাবে এইবার, এখনই গাছ দেখতে নিয়ে যাবে নিশ্চয়, আজ কি লাস্ট ডেট ছিল ডিসকাউন্টের?
না মটকালো না, আমায় বলল, নীচে গিয়ে আমাদের কথাগুলো লিখবি তো? শোন, বলবি এত ভয় খাওয়ার কিছু নেই, হাতে সাবান দিবি, বাড়ি থেকে বেরোবি না, মাস্ক পরবি দরকার মত, মুখে চোখে নাকে হাত দিবি না। ব্যস। আমার হয়ে সব্বাইকে শুভেচ্ছা জানাবি। বলবি সজাগ থাকো, জীবিত থাকো। যা নীচে যা।