Skip to main content


আজকাল 'যোগ্যতা' নিয়ে আলোচনা খুব একটা দেখি না। আপনি কি যোগ্য? এ প্রশ্ন আত্ম-সম্মানে লেগে যাচ্ছে সরাসরি।
     'ইচ্ছা থাকলে মানুষ কি না পারে?' ... 'চেষ্টা করলেই সব হয়' .... 'ও করতে করতে শিখে যাবে' ..... 'জলে না নামলে কেউই সাঁতার শিখতে পারে না' ..... ইত্যাদি সব যুক্তির দোহাই-এ 'কারে দিলে রাজার পাঠ' হয়ে যাচ্ছে যে চারদিকে! যেমন কয়েকটি ঘটনাঃ


১) কেউ কেউ দু'চারখান শাস্ত্র পড়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাচ্ছেন, জগৎ ঈশ্বরশূন্য। সাধনা করে যে বস্তু উপলব্ধি করার, তা যুক্তির প্যাঁচে নস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে। কাঁড়ি কাঁড়ি বই লিখে ফেলা হয়ে যাচ্ছে।
     অন্যদিকে কেউ কেউ কয়েকটা আদ্যিকালের লেখা কিছু কথাকে এমন সত্য বলে ধারণা করে বসছেন যে, কিছু 'উপলব্ধি' করার কোনো প্রয়াস তার আচরণে ব্রাত্য হয়ে পড়েছে। তার সারাদিনের কাজ- কে কে, কোথায় কোথায়, কি কি, কখন কখন তার সেই ছাপা অক্ষরগুলোর ভিন্ন অন্য কিছু ছাপিয়েছে বা বলেছে। খোঁজো তাকে, মারো তাকে।
     আরে ভাই, ক্ষমতার লোভ, দল গড়ার লোভ ইত্যাদি থাকুক, আপত্তি নেই। সরাসরি রাজনীতি করলেই হয়। ধর্মের নামে দল বেঁধে প্রচ্ছন্ন রাজনীতির কি দরকার?

২) এ তো গেল প্রথাগত প্রেক্ষাপটের কথা। শিক্ষকতার অবস্থাও দেখুন। একজন পরীক্ষা দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি বিষয়টির তথ্য সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। ব্যস। শুরু হল শিক্ষকতা, যেন 'জানার ক্ষমতা' আর 'জানানোর ক্ষমতায়' বিশেষ কোনো ফাঁক নেই। ফাঁক আছে বৈকি। আর সেই ফাঁকে আটকে, হাজার হাজার শিক্ষার্থী। যারা শিখবে, না মুখস্থ করবে.... বড়লোক হবে, না বড়মানুষ হবে.... জীবিকার জন্য বাঁচবে, না বাঁচার জন্য জীবিকা নেবে... ঠাওর করতে না পেরে অথৈ জলে। কি করে পারবে? যিনি প্রদীপ ধরে পথ দেখাচ্ছেন, তিনি যে দীপের আলোর চাইতে তেলের হিসাব কষতে ব্যস্ত বেশি। তাই আলো কোন দিকে পড়ল না দেখে কতটা পড়ল তার হিসাবেই ব্যস্ত।

৩) এবার ব্যক্তিগত জীবনগুলোর দিকে তাকাই। সবাই বিশ্বাস করছেন, তিনি সব পেতে পারেন, সব করতে পারেন, চাইলেই। অন্তত বিজ্ঞাপনের দর্শন তাই দাবি করে।
     সে বলে, 'যেখানে দেখানোর কিছু নেই, সেখানটাকেই দেখানোর মত করে তোলা তো আমার কাজ!' মানুষকে একটার পর একটা ধাঁদায় ফেলো। যে ধাঁদাটা আজ অবধি কেউ নাগাল পায় নি, সেই ধাঁদাটার গোলে ফেলো। কি সেই ধাঁদা? 'সত্যিকারের ভালো থাকতে, আমার ঠিক কি কি, কখন কখন, কতটা লাগে'- এ ধাঁদা যে সমাধান করে ফেলেছে, তাকে পেড়ে ফেলা যায় না।
   তাই যারা সেটি পেরে গেছে তাদের 'লুজার' আখ্যা দিয়ে দাও। কারণ সে তোমার মত দৌড়ায় না, আঁচড়ায় না, পাগলের মত চাহিদাকে জাগিয়ে রাখতে পারে না। অসভ্যের মত ভাল থাকে। দিও না তাকে ভালো থাকতে, খোঁচাও।
    এর ফলস্বরূপ কি চূড়ান্ত বিষাদ, অস্থিরতার আবহাওয়া চারদিকে। কারণ আমি ভুলে যাচ্ছি যোগ্যতার ওপর ইচ্ছাশক্তি কাজ করে। ইচ্ছাশক্তি দিয়ে যোগ্যতাকে বাড়ানো যেতে পারে, বদলানো যেতে পারে না।