Skip to main content

খাস্তগীর রোজ কোনো একটা নতুন কারণে কষ্ট পায়।

    খাস্তগীর যা যা হতে পারত নিজেকে ভাবে, আর যা হয়েছে, এই দুটোর মধ্যে মিল খুঁজতে গিয়ে রোজ কষ্ট পায়। 

    কেউ বড় চাকরি পেলে খাস্তগীর কষ্ট পায়। কেউ প্রধানমন্ত্রী হলে খাস্তগীর কষ্ট পায়। কেউ পুরস্কার পেলে খাস্তগীর কষ্ট পায়। 

    খাস্তগীর বিল গেটস, আম্বানি, অমিতাভ, মোদী, শচীন, সদগুরু, ঝুম্পা লাহিড়ি এরকম অনেক অনেক মানুষকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। তার ভাগ্য ছিনিয়ে বসে আছে সবাই। সুখী। সফল। বিখ্যাত। খাস্তগীর ছাড়া। অথচ সে সবই হতে পারত তো!

    খাস্তগীর রোদ্দুর হতে চায়নি, ঈশ্বর হতে চেয়েছিল। জগতের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে দেখতে চেয়েছিল জগতটা কেমন দেখায়। কিন্তু পরিধি থেকে আরো বেশি পরিধির দিকে ঘেঁষতে ঘেঁষতে এমন হয়েছে, মনে হয় সব ছেড়ে পড়ে গেলেই হয়। নিজেকে বহিরাগত মনে হয়। খাস্তগীর মুষড়ে পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নেয়। নিজেকে সামলাতে সামলাতে হতাশ হয়। হতাশ হতে হতে আবার ঝাঁকিয়ে ওঠে - এখনও তো সময় আছে! খাস্তগীর অভিমানী হয়। খাস্তগীরের স্বপ্নে জাগা পাহাড়ের চূড়াটা ত্রিশূলের মত বুকে বিঁধে থাকে। বুদ্ধি বলে, এ সম্ভব নয়! আবেগ বলে কেন নয়? খাস্তগীরের চিন্তা পাগলা হাতির মত দাপিয়ে চলে মাথা। খাস্তগীর আলো নিভিয়ে শুয়ে থাকে খাটে। আসলে যেটা হিমালয় হতে পারত।

    খাস্তগীর স্বপ্ন দেখে। খাস্তগীর মারা গেল। ঈশ্বর এক হাতে হরলিক্স আর এক হাতে মালা নিয়ে দাঁড়িয়ে। খাস্তগীরকে বরণ করে নেবে। সংসার খাস্তগীরকে বোঝেনি। ঈশ্বর জানে, খাস্তগীর কে ছিল, কি হতে পারত, কি হয়নি, কেন হয়নি। 

    খাস্তগীর এক চুমুকে হরলিক্সটা খেয়ে নিয়ে বলে, আমি আলো, আমি কেন্দ্র, আমি পূর্ণ। ওরা অন্ধকার। ওরা পরিধি। ওরা অপূর্ণ। 

    ঈশ্বর খাস্তগীরের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। খাস্তগীর বলে, আমি জেগে আছি, তুমি ঘুমাও। 

    খাস্তগীরের ঘুম ভেঙে যায়। মাথার উপর অবুঝ পাখা। তাকে ঘিরে নির্বোধ মশারি। জানলার বাইরে অন্ধ জগৎ। খাস্তগীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মাথাটা নীচের দিকে ঝুঁকিয়ে কমোডে বসে। কাঁদে। ঈশ্বর রাস্তা দিয়ে হরেকমাল নিয়ে যাচ্ছে শুনতে পায়…. হরেকমাল ত্রিশ টাকা… হরেকমাল ত্রিশ টাকা…..

    খাস্তগীরের অভিমান হয়। যা হতে পারত সে, যে হল এখন, যা হওয়ার ছিল না, সব হরেকমাল। খাস্তগীর হরেকমাল চায় না। খাস্তগীর ঈশ্বরকেও চায় না। খাস্তগীর সব চায়। সব হতে। আবার সব না হতে। খাস্তগীর কষ্ট পায়। খাস্তগীর রোজ কোনো না কোনো নতুন কারণে কষ্ট পায়।