Skip to main content

রবীন্দ্রনাথের পর বোধ করি এই প্রথম কোনো বঙ্গকবি এত বিদেশ ভ্রমণ করিতেছেন। তাহাতে বাংলা সাহিত্যের কি প্রসার বা উন্নতি হইতেছে বলিতে পারিনে কিন্তু বাঙালী পাঠক-পাঠিকাকূলের হৃদয়ে গভীর আন্তর্জাতিক ভাব জাগিতেছে। এতদিন কবিরা চৌরঙ্গী, খোয়াই, ময়দান, পুরীর সমুদ্রসৈকত কিম্বা কাঞ্চনজঙ্ঘার দিকে মুখ ফিরাইয়া কিম্বা পাছু ফিরাইয়া ছবি তুলিবেন, ইহাই রীতি ছিল। সে রীতি ভাঙিয়া কবির বিদেশের নদনদী, পথঘাট, রেস্তোরাঁ, বিদেশী কবির আবাসস্থলের চৌকাঠ, সাদাচর্মের নরনারীকূল পরিব্যাপ্ত ছবি দেখিয়া ভক্ত মহল উদ্বেল হইয়া উঠিতেছেন - আহা কবি কি খাইতেছেন! আহা কবি কি পান করিতেছেন! আহা কবির কোনো অসুবিধা হইতেছে কি? ইত্যাদি ভাবনায় সারা হইতেছেন। পুনরায় বলিতেছি, ইহার সহিত বাংলা সাহিত্যের কি যোগাযোগ তাহা ভবিষ্যৎকাল বলিবে। আমাদিগের ন্যায় স্বল্পবুদ্ধি মানব চেতনায় উহা প্রতিভাত হইতে পারে না।
        কবিভক্ত এত অবধি পাঠ করিয়া হয়ত বলিবেন, ঈর্ষা! সেই বাঙালীকূলের কলঙ্ক প্রাচীন ঈর্ষারূপী বিষপান করিয়া আমি এমন ভাবিতেছি। কিন্তু তাহা সত্য নহে। ঈর্ষা করিবারও ন্যূনতম যোগ্যতাও যে আমার নাই সেকি আমি জানি না? জানি জানি মহাশয় এবং মহাশয়েরা জানি জানি বেশ জানি।
        তবে কি, সাহিত্যচর্চা যদি কেবল শব্দ ও ভাবচর্চা হইয়া থাকে তবে বলিবার কিছু নাই। কবি যদি কেবল ভাবুকতার সপ্তমসুর হইয়া থাকেন তাহলেও বলিবার কিছু নাই। তবে সাহিত্যচর্চা এখন ধুলোবালি মাখিয়া হাটেপ্রান্তরে ঘুরিয়া ফিরিয়া থাকে। তাহার আভিজাত্য আছে কিন্তু কৌলীন্য সে বহুকাল হইল ত্যাগ করিয়াছে। আজ বড় দুর্দিন চলিতেছে আমাদের দেশে। মানবপ্রকৃতি আর দেবপ্রকৃতির যৌথ আক্রমণে অর্ধজলমগ্ন জাতিটার নাভিঃশ্বাস উঠিতেছে। কবি কি তবে ব্রীজ বানাইবেন? ত্রাণের তহবিল চাহিয়া দ্বারে দ্বারে ফিরিবেন? নাকি শোকদুর্দশার কবিতা লিখিয়া খাতা ভরাইবেন? তাহার কি কোনো ব্যক্তিগত জীবন থাকিতে নেই?
        সবই ঠিক। কিন্তু কোথায় যেন মনে হইতেছে এই সময়ে সে অধ্যায় ব্যক্তিগত রহিলেই ভালো হইত। ঝড় উঠিলে প্রস্তর স্থির থাকে ইহাই প্রকৃতি। কিন্তু ঝড়ের প্রবল হাওয়া যদি নদীবক্ষে ঢেউ না তুলে তবে ভয় হয়, একি সত্যই জল নাকি জলের মত দেখিতে অন্য কিছু? আজকাল সব কিছুরই এত 'মত' তৈরি হইয়াছে যে ভয় করে...কবি ও কবিতাও কি তবে 'মত' হইয়া উঠিতেছে?