Skip to main content

নগেনের বউয়ের বাচ্চাটা পেটেই মরল। মরবে না? পোয়াতি সাপটাকে ওরা পিটিয়ে মারল। তারপর পুড়িয়ে দিল। সেদিনই জানত হিরি, এ বাচ্চা বাঁচবে না।

সেদিন সকাল থেকে বৃষ্টি। হিরি চারবাড়ি বাসন মেজে ফিরছে। হঠাৎ দেখে বামুন বাড়ির ভিতরে কি চীৎকার!

হিরিদের সঙ্গে ওরা কথা বলে না। না বলুক। বড়লোক, তায় বামুন। হিরিরা তো নীচুজাত।

তবু দাঁড়ালো হিরি। ও বাড়িতে কাজ করে মুক্তি, বিধবা, দুই বাচ্চা, বাইরে দৌড়ে এসে বলল, দিদি গো… কি বড় সাপ….

হিরি বলল, কি সাপ রে….

ডাঁড়াস….. ডাঁড়াস…. কি যে বড়….

হিরি তবু গেল…. সাপের উপর তার কেমন জানি টান…..

ওই তো সাপটা… বারান্দার, বাইকের নীচে রাখা একটা বড় বাস্কের মধ্যে…. লেজটা দেখা যাচ্ছে…

বাড়ির ছেলে, ছেলের বউ….. ওদের বাবা মা…., কি লাফালাফি….. হিরির হাসি পাচ্ছে…. চোয়াল দুটো শক্ত করে বলল, কি তোমাদের একটা থাকে না…. কারোলিক… না কি জানি অ্যাছিড….. ওটা দাও…. ও গন্ধে বেরিয়ে যাবে….

না না… ও সবে আমার মাথা ধরে যায় মা….. ওসব আমাদের বাড়ি ঢোকে না…. তোরা দিস….

ছেলের বউ বলল।

হিরি তাকালো। চোখের থেকে দুটো কাঁটা বার করে ওর বুকে গাঁথতে যাবে…. দেখল পেট হয়েছে বউটার…. দিল পেটে দুটো কাঁটা গেঁথে…..

মুক্তি বলল, দাও না দিদি সাপটার লেজ ধরে টেনে বার করে…..

হিরি বড় বড় চোখ করে তাকালো। মুক্তি চুপ করে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো।

কথাটা মিথ্যা না। হিরি অনেকের বাড়ি থেকে সাপ হাতে করে বার এনেছে। এ ওর বাঁ হাতের খেলা। সংসারে বিষধর সাপ দেখলে হিরির বুকটা ঠাণ্ডা হয়। জগতে ওটুকু বিচার আছে। বিচার আনতে গেলে বিষ লাগেই।

হিরি বলল, আমি যাই…. অনেক কাজ…. এসব নাটক দেখতে ভালো লাগে না……

=======

হিরি পরেরদিন শুনল অঘটনটা। ওরা নাকি বাইকটা সরিয়ে, ওই বাস্ক শুদ্ধ সাপটাকে আগুন দিয়ে মেরেছে। এমনকি তার আগে কয়েকটা ডাণ্ডার বাড়িও দিয়েছে।

হিরি রাতে স্বপ্নে দেখল তার বারান্দায় সাপটা এসে কাঁদছে। সে পোয়াতি ছিল। হিরিও কেঁদেছে সাপটার সঙ্গে। তারপর পুকুরে গিয়ে ওর ছাইগুলো ভাসিয়ে এসেছে। বাচ্চার ছাইগুলোও।

এরপর কয়েক মাস গেল। এর মধ্যেই ওই নগেনের বউ কলতলায় পড়ল, বাচ্চাটা নষ্ট হল।

হিরি ঘটনাটা শোনার পরেরদিন বামুন বাড়ি গেল। কোনোদিন নিজে থেকে এমনি এমনি আসে না। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে অস্বস্তি হচ্ছে। যেন পেটটা কামড়াচ্ছে। তবু বেল বাজালো। এমনি তো আর আসেনি। নিজেকে নিয়ে ভাবলে হবে এখন?

দরজা খুলল বুড়িটা…. বলল, কি রে?

হিরি বলল, কথা আছে।

হিরির বলার মধ্যে কিছু একটা ছিল। বাড়ির ভিতর গিয়ে বসল। বলল, তোমার বউমাকে ডাকো…

আরে ও তো….

জানি জানি…. ওই নিয়েই কথা আছে….. চলো ও কোথায় আছে?

দোতলায় উঠল বাড়ির গিন্নীর পিছনে পিছনে। কি ডাকবে বুড়িকে? মাসিমা?

ঢুকল ঘরে। এসি চলছে। ঘর কুয়াশার দিনের মত ঠাণ্ডা হয়ে আছে। নগেনের বউ মোবাইল নিয়ে কি করছিল, তাকে দেখেই উঠে বসতে গেল…. বলল, তুমি?

হিরি বলল, শোও… শোও…. জানি বিশ্বাস করবে না…. তবু বলি…. তোমার পেটে যে বাচ্চা ছিল সে মরেছে… কারণ তোমার পেটে দুটো কাঁটা আটকে আছে…. এ পাড়ারই একজন মেরেছে… তাও কিছু হত না…. কিন্তু ওই সাপটাকে মারতে গেলে কেন? জানো না ও পোয়াতি ছিল?

নগেনের বউয়ের চোখে জল…. আমার কেউ কেন ক্ষতি করবে… আমি তো কারোর…

হিরি গিয়ে সামনে দাঁড়ালো। বলল, সাপের বাচ্চার শাপ লেগেছে…. তুমি সামনের মঙ্গল কি শনি আমাদের মনসাতলায় গিয়ে পুজো দিয়ে এসো। নইলে তোমরা কেউ প্রাণে বাঁচবে না…….

শেষের কথাগুলো বলতে বলতে হিরির গলা কঠিন হয়ে চড়ে গেল।

বাড়ির গিন্নী তার হাতদুটো ধরে বলল, তোমাকে ঠাকুরই পাঠিয়েছে মা…. নইলে আমিও ভাবি…. কেন আমাদের সঙ্গে এমন হবে….. তুমি যা বলবে তাই হবে….. এসো…. একটু সরবত খেয়ে যেও…..

হিরি বাইরে এলো। এবার বুকের ভেতরটা শান্তি লাগছে। কেমন যেন কাঁকড়ার খামচ লেগেছিল বুকে।

======

হিরি মরল সাপে কেটেই। এক বাড়ি থেকে সাপ বার করতে গিয়ে, মুহূর্তের অসতর্কতায় ছোবল খেয়ে প্রাণটা গেল।

সেদিন আবার নগেনের ছেলের অন্নপ্রাশন। হিরির নেমন্তন্ন। হিরি একটা নতুন শাড়ি বার করেও রেখেছিল। কিন্তু যাওয়া আর হল না। ভেবেছিল পুকুরে ডুব দিয়ে নতুন শাড়িটা পরে যাবে। আজ কাজেও যায়নি তাই। এর মধ্যে পাকুড়দের বাড়ি সাপ ঢুকল।

মুক্তি কাঁদতে কাঁদতে বলল, দিদি গো… ওবাড়ির সঙ্গে তোমার ভাব-ভালোবাসা ভালোভাবে নেয়নি গো তেনারা। তুমি ওদের সঙ্গে বেইমানি করলে।

সেদিন রাতে মুক্তি স্বপ্ন দেখল, হিরি সাপের বাচ্চা নিয়ে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলছে তাদের উঠানে। মুক্তিকে বলছে, তুই ঠিক বলেছিস…. ও বাড়ি যাওয়া ঠিক হয়নি… ও বাড়িতে সাপের শাপ লেগে না…..

নগেনের বউ স্বপ্ন দেখল, হিরি বলছে, তোর অভিশাপটা আমি নিয়ে মরলাম রে…. আমার বাচ্চাদুটোকে দেখিস…..

নগেনের বউ হিরির বাচ্চাদুটোকে রাস্তাঘাটে দেখলেই স্বপ্নটার কথা ভাবে। শাশুড়ি বলেন, স্বপ্ন স্বপ্নই বউমা। আর সাপের বাচ্চা সাপই হয়। ও বিষাক্ত জাতকে বাড়িতে ডেকে কাজ নেই।