সৌরভ ভট্টাচার্য
3 August 2019
ভদ্রমহিলা একজনের বাইক থেকে নামলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, আপনিই পড়ান?
বললাম, হ্যাঁ।
কথা বলতে বলতে হ্যাণ্ডব্যাগ থেকে একটা কৌটো বার করলেন। তাতে খৈনি। এক চিমটে নিয়ে হাতের তালুতে কষে কষে ডলতে ডলতে নানা প্রশ্ন করতে লাগলেন, নিজের মেয়ের চঞ্চল স্বভাব, অমনোযোগিতা নিয়ে বলতে বলতে নীচের ঠোঁট টেনে টুক করে দলা পাকানো খৈনিটা রেখে, ফের কথা চালিয়ে যেতে লাগলেন। উচ্চারণ বদলালো কিন্তু দুর্বোধ্য হল না।
এরপর বেশ মাসখানেক হল। আমি ভুলেই গেছি ঘটনাটার কথা। একদিন বিকালে মেয়েকে সঙ্গে করে নিয়ে এলেন। আজ সম্পূর্ণ অন্য মানুষ। নীল সাদা সালোয়ার কামিজ। চুলটা টানটান করে বাঁধা। সেদিনের সে ঝোড়ো মুখ না। হাতে খৈনি নেই, ব্যগটাও নেই।
স্বামী নেই। ক্যান্সার হয়েছিল। মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি থাকেন। বিড়ি বাঁধেন। মেয়ের চোখে লজ্জা, অস্বস্তি। আশেপাশের বন্ধুদের মায়েরা তো তা নয়। বারবার কথা বদলাতে চাইছে সে। প্রচণ্ড স্মার্টনেসে সারা শরীর ক্ষিপ্র হয়ে যেন একটা বিদ্রোহ করতে চাইছে, প্রতিবাদ করতে চাইছে, কিন্তু বুঝছি চোখের কোণে মেঘ জমছে, কথা আর বাড়লেই শ্রাবণ নামবে।
আকাশে সত্যিই তখন মেঘ জমেছে। আমি বললাম, আপনারা এগোন, বৃষ্টি আসতে পারে।
চলে গেল। বৃষ্টি এলো খানিক পর ঝমঝমিয়ে। আমার ঘরে হালকা খৈনির গন্ধ। পরেরদিন মেয়েটাকে বললাম, স্বাবলম্বী হতে হবে, মায়ের মত। বললাম না আমার ঘরের নানা গার্জেনের ডিও কিম্বা পারফিউমের গন্ধের চাইতে এই গন্ধটা অনেক স্বস্তিকর। অন্তত সোজা দাঁড়িয়ে তো আছেন।
মেয়েটা চশমার ফাঁকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, পুরোনো বই, এই সিলেবাসে চলবে?
বললাম, চলবে। যেটুকু খামতি থাকবে লিখে নিলেই হবে।