Skip to main content

দোকান বন্ধ করে নন্দদুলাল মাফলারটা জড়িয়ে বেরোতে যাবে, এমন সময় একজন এসে দাঁড়ালো।

শীতের রাত। আপাদমস্তক চাদরে মুড়ি দেওয়া। নন্দদুলালকে বলল, দু পয়সার মুড়ি দাও দিকিনি।

নন্দদুলালের মাথাটা বাঁ করে ঘুরে গেল। দু পয়সার মুড়ি, কে রে? একি কোমাতে ছিল নাকি অ্যাদ্দিন!

নন্দদুলাল বলল, আরে আমি দু পয়সা চোখেই দেখলাম না....

পায়ের কাছে কিছু একটা ছুঁড়ে দিল খদ্দের।

নন্দলালের থেকে থেকেই স্লিপডিস্ক হয়। তাও ঝুঁকি নিয়ে ঝুঁকে দেখল একটা আধুলি টাইপের কিছু পায়ের কাছে পড়ে। বড়মামার কোমরে লাল সুতোয় জড়ানো এরকম কিছু একটা দেখেছে মনে পড়ল নন্দদুলালের। সে বলল, এ নিয়ে কিস্যু হবে না....

বলতে গিয়ে ঘাবড়ে গেল। খদ্দেরের গলাটা তো ঠিক কেমন যেন অন্যতর না?!..... নন্দদুলালের মাথায় ধাঁ করে যে চিন্তাটা এলো সে চিন্তায় রামনাম ছাড়া আর কিছু সম্বল ছিল না।

নন্দদুলালের ঠাণ্ডায়, ভয়ে দাঁত কপাটি লাগার জোগাড়। খদ্দের এসব দেখে বলল, শোন বাবা, মুচ্ছো যাওয়ার আগে এ কথাটা শুনে যা, আমি কিন্তু কিনতে চেয়েছিলাম। তুই দিসনি। আর হ্যাঁ, তুই যা ভাবছিস আমি তাই। গলায় দড়ি দিয়েছিলাম এক মিনসেকে ভালোবেসে। সে মরে চারবার জন্মে গেল, আমার আর কোনো হিল্লে হল না। নে এবার মুচ্ছো যা।

নন্দলাল নিজেকে আটকে নিল। বলল, তা আপনি আজ এদিকে কেন?

খদ্দের বলল, সে অনেক কথা বাবাজীবন। তুমি একজন বিধবা মানুষকে, থুড়ি পেত্নীকে একাদশীর দিন না খাইয়ে রাখবে... একি ধম্মে সইবে বাবাজীবন?...

আপনি যে বললেন, আপনি সেই তেনাকে না পেয়ে গলায় দড়ি দিলেন... তবে বিধবা হলেন কি করে?, নন্দদুলাল উকিলের মত জিজ্ঞাসা করে বসল।

সে খুক খুক করে হেসে বলল, আহা, সে ভালোবাসার মানুষ, মলো মানেই আমি বেধবা হলুম... সে আমায় মাথায় সিঁদুর দিক চাই না দিক.... আমি তাকে ছাড়ছি না....

এখন তিনি কোথায়?

হাওয়ায়, সদ্য দেহ ছেড়েছেন তো..

ও, এদিকেই কোথাও...

আরে কৃষ্ণদুলালের নাতি রে, তোর ঠাকুর্দা হঠাৎ ছাদ থেকে পড়ে কদিন আগেই মারা গেল না? ওই তো ছিল রে... ও যতবার জন্মায় আমি ততবার ওর আশি হলেই টেনে নিই.... কি হবে অদ্দিন বেঁচে... দিলুম ধাক্কা... ওতেই অক্কা...

তা তিনি কিছু মনে করেন না.....

করে না আবার... কিন্তু আমায় ছেড়ে যাবেই বা কোথায়.. কি গো হল?

এই বলে একটা হাঁক পাড়ল খদ্দের। অমনি নন্দদুলালের নীচের চোয়াল ঝুলিয়ে, তার চোখকে ছানাবড়া করে, এক ঠোঙা মুড়ি নিয়ে তার ঠাকুর্দা সামনে এসে দাঁড়ালো। একটু চোখ টিপে বলল, এ সব তোর ঠাকুমাকে বলিসনি যেন.... কষ্ট পাবে....

নন্দদুলাল হ্যাঁ বা না কিছু বলার আগেই সব হাওয়া। নন্দর হাতে একটা আধুলি।