Skip to main content
puchu

বাংলা উচ্চারণে 'র' আর 'ড়' খুব সাংঘাতিক শব্দ। "আজি ঝড়ো ঝড়ো মুখড়ো বাদড় দিনে"... এরকম গান শোনার অভিজ্ঞতা নেই এমন সরেস কর্ণধারী বাঙালি মানুষের সংখ্যা নিতান্তই কম। 

    আমার এখানে আলোচ্য বিষয় হল, আমি খবরের কাগজ 'পড়ব' না 'পরব', এই বিষয় নিয়ে। দেখুন এই প্রথম আমি দুটো শব্দকেই এক বিষয়ে চাক্ষুষ করলাম। 

    যিনি খবরের কাগজ পরে দাঁড়িয়ে তিনি আমার জেঠিমা। উনি যখন শাড়িটা কেচে শুকাতে দিয়েছেন তখন ভোরবেলা। আমি ঘুম থেকে উঠে চশমা ছাড়া বারান্দার দিকে এগোচ্ছি, কারণ কাগজগুলো শিশুর মত পড়ে আছে এতক্ষণে, আমার কোলে তুলে নেওয়ার অপেক্ষায়। ওমা! দেখি তারা লোহার তারে মেলা। আমি ভাবলুম কাগজগুলো এমন জুড়ে জুড়ে তারে মেলে দিয়ে গেল কে? বলি এ কিরকম ঠাট্টা বাপু! তারপর কাছে গিয়ে দেখি, এতো পাঠের বস্তু নয়, পরিধানের বস্তু। যা হোক মন্ত্র লেখা শাড়ি দেখেছি আগেই, মনে পড়ল। বেলুড়মঠে একজন মহিলা শিবনেত্র হয়ে ভাষণ শুনছেন। তাঁর শরীর আবৃত করে প্রায় পুরো বেদান্ত। আহা! চোখ জুড়িয়ে গিয়েছিল (মহিলাকে দেখে নয়, মন্ত্রাবরণ দেখে)। তবে অত অত ব্রহ্মচারী, সন্ন্যাসী, তাদের কি সংকটে পড়তে হয়েছিল ভেবে উদ্বিগ্নই হয়েছি। মানে তাদের পক্ষে কামিনীকাঞ্চন ত্যাগের ব্যবস্থাপত্র কিনা! তায় আবার সন্ন্যাসী নাকি কাঠের মেয়েও দেখবে না! তবে? এবার? একে কামিনী, তায় ঘিরে মোক্ষলাভের বাণী! মাগো মা, আয়রনি কাকে বলে। 

    দ্বিতীয় ছবিটি আমার নাতির। মানে Debasish আর Reppal এর পুত্রের। ইনি জন্মাবধি ভাবুক। খুব কম হাসেন। রীতিমতো বিবেচনা করে অঙ্গসঞ্চালন করেন। কার কোলে যাবেন তা নিয়েও অসংযমী নন। স্থির বসতে পারেন না বেশিক্ষণ। যার উপর কৃপাদৃষ্টি পড়বে তার কোলে উঠে তাকে নির্দেশ দেবেন তিনি কোনদিকে যেতে চান, কি কি ওনার দ্রষ্টব্য, আর কি কি উনি ওনার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হস্ত সঞ্চালনে স্থানভ্রষ্ট করতে চান বা ভূপতিত করতে চান। 

    শুরুতেই বললাম, ইনি ভাবুক। আমার খুব আশ্বাস আমার যাবতীয় পুস্তকের ইনিই যোগ্য উত্তরাধিকারী হতে চলেছেন। মায় কথা বলতে শিখেই যদি জিগায়, "দাদা ব্রহ্ম কি?" আমি তাতেও বিস্মিত হব না। যে বয়সে শিশু নিজেকে নিয়ে বিহ্বল থাকে, সেই বয়সে যিনি এইভাবে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে উৎকণ্ঠিত থাকেন তাকে নিশ্চিয় সাধারণ পদবাচ্য করা উচিৎ নয়। 'এই সময়' এর সম্পাদক দেখলে নিশ্চয়ই পরমাহ্লাদিত হতেন, "এও সম্ভব" চিন্তা করে। যা হোক, জগতে সবই সম্ভব দাদা গো, যত বয়েস বাড়চে তত বুঝচি, আরো কত কত বিস্ময়ের সাক্ষী থাকব সে বৈকুণ্ঠনাথই জানেন। জয়গুরু।