"ন্যাকামি করবেন না"।
মজার কথা হচ্ছে, কেউ কিন্তু উঠে গেলেন না। কেউ বললেন না, আপনি এই শব্দটার জন্য ক্ষমা না চাইলে অনুষ্ঠানটা আর একরত্তিও এগোবে না। একজন জিভ কেটে পাশে বসে হাসলেন। বাকিদের অভিব্যক্তি ক্যামেরায় ধরা পড়েনি।
তবে সেদিনে সবাই নাকি ভীষণ রেগে গিয়েছিলেন। ফেসবুক জুড়ে পোস্টের পর পোস্ট দেখছি। কিন্তু আরো অন্য দলের মানুষ যারা ছিলেন তারা উঠে গেলেন না কেন, কেন ক্ষমা চাইতে বাধ্য করলেন না, কেউ প্রশ্ন করছেন না। সবাই আসলে তীক্ষ্ম উত্তর দেওয়ার জন্য অস্ত্র শাণিয়ে এসেছিলেন তো। সবারই তো নিজের দলের কথা, নিজের বিশ্বাসের কথা বলার ছিল। তাই ওই শব্দটার বা ওই অপমানটার প্রতিবাদ করে সে সুযোগ হাতছাড়া কেউ করবেনই বা কেন। তার চাইতে বড় বড় বাঘা বাঘা শব্দ - ফ্যাসিস্ট, নারীবিদ্বেষী এইসব বললে বেশ গা জোয়ারি হবে যে।
অথচ দেখুন ইন্টারভিউ ছেড়ে মাঝপথে উঠে আসার ঘটনা ভারতের মিডিয়ায় ঘটেনি যে তা তো না। সে যে কারণেই হোক। তারা উঠে তো গিয়েছিলেন।
এরা কেউ চেয়ারটা ঠেলে উঠে দাঁড়িয়ে বলতে পারলেন না, হয় উনি ওনার কথাটা উইথড্র করবেন, বা ক্ষমা চাইবেন নতুবা আমি চলে গেলাম। না কেউ করলেন না। আলোচনা অন্যদিকে ঘুরে গেল। এত এত দর্শক শ্রোতারা চুপ করে রইলেন। সঞ্চালক মিটিমিটি হেসে তাকিয়ে রইলেন। তাকাবেন না? TRP বাড়ছে যে! বরং ওই অংশটুকু কেটে আলাদা করে মিডিয়ায় ছেড়ে দিয়েছেন ওনারা... আহা লোকেরা হেব্বি খাচ্ছে যে... 'কি বললেন উত্তরে শুনে দেখুন'....
আসলে সুক্ষ্ম তর্ক, বাদ-বিবাদের একটা নেশা আছে জানেন তো। বিশাল সে নেশা। চট করে ছেড়ে ওঠা যায় না। সে সুক্ষ্ম তর্ক বাদবিবাদ শুনতেও যেমন নেশা, বলতেও নেশা। ঘ্যাচাং করে এর কথা ও কাটছে, তার কথা সে কাটছে, উফ কি মজা মাইরি। জমে ক্ষীর সব! এর মধ্যে হঠাৎ করে কার একটু অপমান হয়ে গেল.... আরে তার জন্য আছে তো সময়, পরে রসিয়ে প্রতিবাদ করা যাবে। ঠাণ্ডা মাথায় লেখা যাবে। আপাতত চেয়ারটা তো গরম করে নিই।
এই হয় আসলে জানেন তো। অনেক উচ্চতত্ত্বের নেশায় মেতে গেলে বেসিক জায়গাটা আড়াল পড়ে যায়। বড় জিনিসের এই এক দোষ। মনে নেই সেই ভরা রাজসভাতে ওসব হলেও আমাদের রথী-মহারথীদের মধ্যে এক বিদূর ছাড়া কেউ বেরিয়ে যাননি শুনেছি। ভুলও হতে পারি। অনেক মত তো।
বড় তত্ত্ব নিয়ে ঠোকাঠুকি পরে হবে। আগে মূল জায়গাটা ঠিক করে নিই, এ কেউ বলবে না। সেই জন্যেই আর একদল চীৎকার করে বলছে, বেশ করেছেন উনি, এক্কেবারে যোগ্য উত্তর দিয়েছেন.. কি জোর দেখলি, যা বলার মুখের উপর সোজা বলেন, কোনো রাখঢাক নেই।
এই তো হল কথা। আসলে সব কথার তো উত্তর হয় না। হয় চলে যেতে হয় তৎক্ষনাৎ, নয় দাঁড়িয়ে বলতে হয়, এক্ষুণি ফিরিয়ে নিন ও কথা!
কেউ বলবে না। মাথায় যুক্তি যত শাণিত, সাধারণ বোধ যে তত গ্ল্যামারস নয়। পাছে লোকে যদি বোকা, সেন্টিমেন্টাল বলে। কিন্তু পুরো মরালিটিটাই যে একটা শুদ্ধ সেন্টিমেন্টের থেকে জন্মায়, সে কথা তো তর্কের নেশায় ভুলে খেয়ে বসে আছি। সেই শুদ্ধ সেন্টিমেন্ট নেই বলেই, আরেক রূঢ় সেন্টিমেন্ট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মাঝে তর্ক করে ভাবছি কি একটা করছি আহা! দুত্তোর!!