কোনোদিন শুনিনি কেউ অক্ষরেখা দ্রাঘিমারেখা চাপা পড়ে মারা গেছে। কিম্বা এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে আকাশের সীমারেখা পেরোতে গিয়ে কোনো উড়োজাহাজ সীমারেখা জড়িয়ে ভেঙে পড়েছে। ওসব মাথার মধ্যেই থাকে। ভূতই বলো আর ভগবানই বলো।
আজ ট্রেনে আবার যে অন্ধ ভিখারিনীকে ট্রেনে দেখলাম সে বিগত কয়েক দশক ধরে ভগবানের নাম গেয়ে ভিক্ষা করে আসছে। মনটা বড় ঠকঠক করে বেজে উঠল। মনে হল ওকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসা করি, কার জোরে এত বিশ্বাস তোমার? কই শুনলো তোমার ভগবান এত বছরেও? কেন ডাকো?
খানিক বাদেই দেখি ট্রেনের ভিড় ঠেলে আরেক বয়স্ক অন্ধ মানুষ, তার স্বামী, সেও একই গানের ধুয়ো দিতে দিতে তার পিছন পিছন চলেছে।
কি টানে আটকা রইল ওই দুই অন্ধ মানুষ? GST থেকে শুরু করে কোয়াণ্টাম ফিজিক্স, কিম্বা সক্রেটিস থেকে চোমস্কী কিছুই তো জানে না। জানে কটা গান, কয়েকটা ট্রেনের যাতায়াতের সময়, শাড়িটা ঠিক করে পরতে, চলন্ত ট্রেনের দরজা এড়িয়ে চলতে...আর ভালোবাসতে। রোম্যান্টিক ভালোবাসা নয়! যে ভালোবাসা বিছানায়, বঁটি-হাতা-খুন্তিতে, মগে, টিপে, খঞ্জনিতে, ছোঁয়াতে...আর পাশে থাকার সর্বোপরি আশ্বাসে আর সাধনাতে। এই কি কম গা? সংসারে এই অতিতুচ্ছ বস্তুই যেদিন দুর্লভ লাগে সেদিন কারোর সাথে চোখাচোখি হয়ে যায়। যে এই বৈষম্য আর দুঃখ-অভাবের সংসারকে তার মধ্যে ভুলিয়ে নিয়ে অনন্ত পথে পাড়ি দিচ্ছে। কে সে? জানি না তো, আবার জানিও।