বাড়ির সবাই কাজে বেরিয়ে গেলে মেয়েটা বড় এক গ্লাস চা নিয়ে বসে। সম্পূর্ণ একা এই সময়টায়। ঘড়ির আওয়াজ, ফ্যানের আওয়াজ, ফ্রিজের আওয়াজ, আর মাঝে মাঝে তার দীর্ঘশ্বাসের শব্দ, কাশির শব্দ। মেয়েটা অপেক্ষা করে। কেউ আসুক সে চায় না। কিন্তু অপেক্ষা করতে ভালো লাগে। স্পষ্ট কারোর মুখ ভাবে না। অবয়ব ভাবে। যে পুরুষ বাস্তবে নেই। কিন্তু তার গ্রামে আছে। তার ঘর আছে। ভ্যান আছে কিম্বা দোকান। তার দুজোড়া জামা আছে, একটা নীল আরেকটা সাদা। তার লুঙ্গি আছে দুটো। গোঁফ আছে। লম্বায় সে তার থেকে দুই আঙুল বড়। কালো। তার মুখে হাসির ঝাপট, পানকৌড়ির ডানার পুকুরে জলে আলতো ঝাপটের মত। চোখদুটো বর্ষার পুকুরের মত। তার গামছায় একটা নিশ্চিত ভালোবাসার ঘ্রাণ।
তার ভাবতে ভাবতে শরীর গোলায়। বুকের ভিতর প্রজাপতি ছটফটায়৷ হাতের তালু পায়ের তালু ঠাণ্ডা বরফ হয়। ঘাম হয়। নাইটির ঘেরে বাঁধন লাগে। মাজা বাসনে ঘামের দাগ লাগে। আবার মাজে। মাজতে মাজতে মুখের ছবি দেখে বাসনের গায়ে। ঝাঁটাতে ঝাঁটাতে কান্না পায়। অফিস থেকে দিদি দাদা ফোন করে। রাতের রান্নার মেনু বলে।
টিভি চালায় সন্ধ্যেবেলা। ড্রয়িংরুমে অনেক মানুষ। পর্দার মানুষ। কথা বলে, সে শোনে। হাসে, কাঁদে, ভাবে, রান্না চাপায়। চা খায়। টিপ পরে, সন্ধ্যেবেলা শাড়ি পরে। বাইরের লোক আসে যে। চা দিতে হয়!
তার রাজপুত্তুর যে গ্রামে থাকে, সে শোয়ার ঘরে অপেক্ষা করে। মেয়েটা সব কাজ সেরে, সব শেষে খেয়ে, বাসন মেজে ঘুমাতে যায়। রাজপুত্তুর নীল জামা পরে দুষ্টুমি করে। সে বলে, আজ আর না গো, খুব ক্লান্ত।
সে কালীর ছবিতে প্রণাম করে, বালিশে নিজের মাথার গন্ধে, নিজেকে নিয়েই শুয়ে পড়ে। পর্দা ওড়ে। ঘুমন্ত কলকাতা শোনে গ্রামের গল্প কানে কানে স্ট্রীট লাইটে, একলা দাঁড়ায় কে ওটা রে? কে ওটা রে?
সৌরভ ভট্টাচার্য
14 December 2018