Skip to main content
কে যায় অমৃতধামযাত্রী


ঈশ্বরের ভালোবাসার মধ্যে না বাস করতে চেয়ে, তাকে ভালোবাসার চেষ্টা করাটার মধ্যে একটা চতুরতা আছে। 
খ্রীষ্ট কি কৃষ্ণ যখন বললেন, একে অন্যকে ভালোবাসো, ব্যস আর কিচ্ছুটি করতে হবে না, ওতেই আমি তোমার উপর প্রসন্ন হই, তখন কথাটা মনে ধরল না। সে খুব কঠিন শর্ত মনে হল।
যেই না কেউ এসে বলল, অমুক তমুক করলে তিনি খুশী হয়ে যান, তৎক্ষণাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে তা করতে সম্মত হলুম। কারণ ভালোবাসার মধ্যে থাকার জন্য সেই 'সবাইকে ভালোবাসো' নামক হ্যাপা রইল না, কিন্তু কিছু ক্রিয়া-কর্মে তাঁকে খুশী করে অর্থাৎ তেল দিয়ে কাজ হাসিলের পথটা খোলা রইল। তাই কর্মকাণ্ড, দেবালয় বেড়েই চলল, বেড়েই চলল। সে তো চলবেই, মিথ্যার কোনো সীমা নেই বলেই তো সে মিথ্যা!
আসল কথাটা চাপা পড়েই রইল, পড়েই রইল, পড়েই রইল। তবু কি হয়, কিছু মানুষ সেই মূল সুরটা ধরে ফেলে। বাঁচে। গান গায়। নাচে। নাচায়। আর সেরকম মানুষটা যখন হঠাৎ চলে যায়, তখন মনটা কেঁদে ওঠে, ভিতরের মহাপ্রাণীটাও কেঁদে ওঠে। ধাক্কাটা ভিতর অবধি এসে আঘাত করে। কালিকাপ্রসাদের মধ্যে যে শুধু গ্রামের সুর পেয়েছিলাম তা তো নয়, একটা মাটির সাধনা, বাউলের মন, ফকিরের ভালোবাসার ছোঁয়া পেয়েছিলাম আমরা। আমাদের এই ইঁট-সিমেন্টের সংসারে, প্রয়োজনে বাঁচা-ছোটার পুনরাবৃত্তির মধ্যে কালিকা এক দমকা খোলা হাওয়া এনে দিয়েছিল। সে হাওয়াটাকে আমরা চিনতুম না যে তা না, তাকে ভয় করতুম। পাছে আমাদের কৃত্রিম ভিতকে সে নাড়িয়ে গুঁড়িয়ে দিয়ে চলে যায়। আমরা জানি যে, যে শক্তিতে অহং নেই, সে শক্তিতে প্রেমের চির আবাস, তা প্রেমই। তার জোরের কাছে এ সংসার তো তুচ্ছ, স্বয়ং মৃত্যুও তাকে ভয় করে চলে। সেই সরল, সহজ প্রেমের, অন্তরের অন্তরতম মানুষের খোঁজ কালিকা করেছিল, হয় তো বা পেয়েওছিল। তাই অতো সহজে সহজ হতে পেরেছিল। সহজ না হলে সে সহজকে যে ধরা যায় না!
তাই আজ এই পরম শোকের মুহুর্তেও বিশ্বাস রাখি, মৃত্যুর পরের পথটায় সে পথের ধারে কোনো এক আনন্দবাজারে সে পাড়ি দিল। এত নৃশংস কেন সে পথ তবে? কে উত্তর দেবে? 'না' টা মিলিয়ে যাবে কালের নিয়মে, 'হ্যাঁ'টাই থাকবে, থেকে যাবে। সেটা বিশ্বাসের, সহজের, ভালোবাসার। অবিশ্বাসে, ক্ষোভে শুধু কালিকাকেই অশ্রদ্ধা করা হবে। যে শ্রদ্ধা করতে শিখিয়েছিল সহজকে।
আবার কোনো ফকির আসবে, যে সে মালিকের ভালোবাসার মধ্যে বাস করে, ভালোবেসে তাঁর ভালোবাসাকে। কৈফিয়ত চায় না, কি দেয় না। শুধু গায়, নাচে আর গাওয়ায়, নাচায়। সেই তো মহাজনের কারবার!