Skip to main content

খুব অন্ধকার রে চারদিক আজ
তপসিয়া খাল, ওলা ক্যাব, দুজন নরখাদক
    আর একটা ইনারের মত চেনা শব্দ - ধর্ষণ
  এরা মিলে তোকে চেনালো।


দমবন্ধ, গুমোট আবহাওয়া
   একটা কালবৈশাখী চাইছি রে,
বড় আবর্জনা জমেছে চারদিকে
       বড্ড রুগ্ণ মনগুলো,
মেরুদন্ডহীন পড়ে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে

(নীচের লেখাটাও অনর্থক জানি রে। তবু এত ঘুমও মানুষ ঘুমায়!? তোর চিতার ছ্যাঁকাও হজম করে যাবে? অবশ্য নতুন তো কিছু না। এদের নতুন কিছু একটা লাগে।)


সমাজে কে কতখানি নিরাপদ তা চুড়ান্তভাবে নির্ণয় করা কোনোদিনই সম্ভব নয়। তা সে আমেরিকা'র 'ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার' হোক কিংবা কলকাতার ফুটপাথে ভোর পাঁচটায় জাগা এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষিতা ও মৃতা বারো বছরের বালিকা হোক।
আমি কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নই, তবুও স্বাভাবিক বোধবুদ্ধি বলতে যা বোঝায় সেগুলো যখন দিশেহারা হয়ে ওঠে তখন চুপ করে মন-মুখ ফিরিয়ে থাকাটাও মুশকিল হয়। অসম্ভব হয় বলব না, কারণ ঘটনাটা জানার পরেও দৈনন্দিন কাজগুলো করে যেতেই পেরেছি। অসম্ভব হয় তখন যখন ঘরে আগুন লাগে। সেকথা থাক।
আচ্ছা, মেয়েটা তো ডেঙ্গুতেও মারা যেতে পারতো, কিম্বা ম্যালেরিয়ায়। কিম্বা ওই ওলা ট্যাক্সিতে চাপা পড়ে ভোরবেলায় রাস্তা পার হতে গিয়ে। এগুলোর একটাও ঘটলে শুধু দুর্ঘটনা বলতাম, অথবা দুর্ভাগ্য। কোন প্রবল শক্তিশালী আসুরিক ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষের যখন মৃত্যু হয়, অথবা হত্যা করা হয় তখন সেটা একজনের মৃত্যু হয়। কিন্তু যখন একজন অসহায়, ঠিক অসহায় না, অতিসাধারণ স্বাভাবিক মানুষ অত্যাচারের শিকার হয় তখন তা সবার হয়। তাই দুর্যোধনের বা কংসের হত্যা এক'র নাশ, কিন্তু দ্রৌপদীর শ্লীলতাহানি ভরা রাজসভায়, কিংবা অভিমন্যুর হত্যায় আমাদের মধ্যের মহাপ্রাণীটি ককিয়ে ওঠে।


মেয়েটা পৃথিবীটাকে সদ্য চিনতে শিখছিল। সে যে পৈশাচিক অভিজ্ঞতাটা নিয়ে গেল তা বর্ণনাতীত। শুধু বলা যায়, পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগে হয়তো সে বাবা মা নিকটাত্মীয় বন্ধু ভগবান, সর্বোপরি সেই দুই অমানুষের কাছেও প্রাণভিক্ষা করেছিল - জানি না।
ধর্মনীতি রাজনীতিতে ঐতিহাসিক যুগ থেকেই মৃত্যুর মিছিল চলে এসেছে - সে একরকম। কারণ ধর্মনীতি রাজনীতি না চাইলেও বিভেদনীতি টানে। আমি নিজেকে হিন্দু ভাবলে, অমুসলিম, অবৌদ্ধ ইত্যাদি তো হতে হয়ই। ঠিক তেমনি রাজনীতিতে। সেখানে শত্রুতার বীজ নিজের অজান্তে আমিই পুঁতি। তাই সে হত্যা কিছুটা বুঝি। কিন্তু কাম? একে চরিতার্থ করবার জন্য সমাজে নানাবিধ উপায় তো তৈরি হয়েছে! একটা বৈধ রূপরেখা তৈরি করার চেষ্টা তো করা গেছে। তবুও কোথায় ফাঁক থেকে যাচ্ছে।


যারা Daughters Of India তথ্যচিত্রটি দেখেছেন, তারা দেখেছেন, 'নারী ভোগ্যবস্তু' এ ভাবটা ক্লিশেরও ক্লিশে এমন ক্লিশে যে, একে নিয়ে ভাবতেও হয় না। যেমন গাছের পাতা সবুজই হয় - এ নিয়ে ভাবতেও হয় না। যেকোন ধর্মে পুরুষের পৌরুষের দিব্য মোড়কের একটা ভূমিকা থাকে। তাই আজ অবধি কোন ধর্মে ভগবানকে নারী প্রতিনিধি নির্বাচন করতে জ্ঞানত দেখলাম না - অন্তত আমার জানা নেই। ত্যাগ, বৈরাগ্য, মহত্বে পুরুষ তার সমস্ত কীর্তি দেখানোর পর অবশিষ্ট যে স্থানটুকু পড়ে থাকে তাতেই নারী তার সমস্ত শক্তিটুকু দিয়ে নিজের মহত্ব দেখাবার সুযোগ পেতে পারেন। তার প্রধান কাজ পুরুষের আজ্ঞানুবর্তী হয়ে সেবাপরায়না হওয়া।খুব শিক্ষিত সব পরিবারেও কি এ মানসিকতার জিনগত পরিবর্তন ঘটেছে? ঘটেনি তো। সবচেয়ে মজার কথা হল অধিকাংশ মেয়েরা এই পরিসরটাতে এত অভ্যস্ত ও নিরাপদ বোধ করেন যে, চট করে এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না। আর যদি পারেনও বা, তবে 'পুরুষদের সাথে সমান অধিকার' চেয়ে বসেন। মাপকাঠিটা সেই 'পুরুষ'ই হয়। অর্থাৎ পরোক্ষভাবে পুরুষতান্ত্রিকতা'কে স্বীকার করে নেওয়া। অথচ যদি মানবিক অধিকারগুলোকে নিয়ে সচেতন হওয়া যেত তবে কারো সমান হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় আসতে হত না। নিজের পথই বানানো যেত, সে অন্য প্রসঙ্গ।


আর যদি বিকৃতি বলি, তবে বিকৃতি জন্মায় কীসে? অবদমিত কামে? যদি তাই হত তবে একমাত্র সাধু সন্ন্যাসীদের মধ্যেই এই ইচ্ছা প্রবল হত। অথচ বাস্তব তো সেটা নয়! সামাজিকভাবে বা অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর - সেই ক্ষোভ যদি কারণ হত তাহলে সব ধর্ষকদেরই একটা সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুস্পষ্ট সীমারেখায় পাওয়া যেত। তাও তো নয়। তবে এর উৎস কি? অত্যধিক পর্নোগ্রাফির প্রচার? তাই যদি হত তবে পর্নোগ্রাফি দেখার মাত্রা নির্ধারণ করে ধর্ষণ আটকানো যেত। বাস্তবে তাও তো না! তবে কি প্রতিহিংসা? ক্ষণিক মত্ততা?
জানি না। একে আটকাতে হলে আইনকে যে কড়া হবে আর তৎপর হতে হবে এ কথা মানি। রবীন্দ্রনাথ বলতেন, 'তখনই কোন ভাবনা সত্যিকারের ভাবনা হয় যখন সে ভাবনা আমাদের ভাবাইয়া তোলে।' আমি আমার আশেপাশের ঘনিষ্ঠ তথা দূরের মানুষদের মধ্যেও এমন একটা নির্লিপ্ত উদাসীন ভাব দেখি বা লক্ষ্য করি এ ধরণের ঘটনাগুলোয়, আমার নিজেকে মনে হয়, 'আমি কি বেশি ভাবছি? এদের তো কোন অসুবিধা হচ্ছে না!' যখন পাঁচ'শ লোক পথে নামে মোমবাতি নিয়ে, কিম্বা ব্রেকিং নিউজ হয়ে বারবার ফিরে আসে টিভিতে তখন তাদের নিয়ে কথা বলতে শুনি। তবে সেটা নিছকই একটা উত্তেজক ঘটনার বিবরণমাত্র, মর্মান্তিক নয়। হয়তো মনে মনে প্রার্থনা করে, আমার নিজের লোকের সঙ্গে যেন না ঘটে!
কথাটা হচ্ছে 'কিছু একটা' করার না। ভয় এই উদাসীনতাকে। মনুষ্যত্ব যদি আছে, তবে অসুরভাবও আছে। আমরা কোন দিকের? তবে কি আমরা অসুরভাবের দুর্বল প্রতিবাদী মাত্র? ব্যস?!


মেয়েটা ওই ওলা ক্যাবের মধ্যে কাউকে ডেকে সাড়া পায়নি। সেই দিনটায় আমরা আসতে চলেছি, যেদিন আমরাও ডেকে কারোর সাড়া পাবো না। বিষাক্ত হয়ে উঠছে চারধার। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিখা আছে। সে শিখাগুলো মিলিত হয়ে মশাল হয়ে উঠবে কবে?