(ছুঁৎমার্গীরা লেখাটা এড়িয়ে যান প্লিজ)
- আমাকে বোঝা, এই ৩৭৭ উঠে গেলে তোদের সুবিধা কি হবে? যৌনতার স্বীকৃতি থাকল, অথচ সম্পর্কের কোনো স্বীকৃতি নেই, কেমন একটা আধখাপছাড়া ব্যাপারটা হয়ে গেল না? কেউ কারোর সাথে যৌন সম্পর্ক তৈরি করল অথচ তার কোনো সামাজিক স্বীকৃতি থাকল না, এটা কিরকম একটা না? একটা সম্পর্ক তো শুধু শরীর দিয়ে হয় না, তার সাথে তো একটা গোটা মানুষ, তার ভবিষ্যৎ, তার গোটা জীবনটাই জড়িয়ে যায়। সেখানে তার সুরক্ষা কোথায়? নিরাপত্তা কোথায়? মেজরিটিতে যে সেক্স্যুয়াল রিলেশান, মানে আর কি হেটেরোসেক্স্যুয়ালিটি, মূলধারার যৌনতা, সেখানেই কোর্ট-কাছারি, রেজিস্ট্রি ইত্যাদি করেও সম্পর্কের নিরাপত্তা থাকছে না, এখানে শুধু একটা যৌনতার স্বীকৃতিতে এমন কি আসবে যাবে?
- তুমি যা বললে তা ঠিক, কিন্তু প্রথম ধাপটাই তো আগে আসুক, তারপর পরেরটা নিয়ে পরে ভাবা যাবে। সেও একটা লড়াই। তবে এই সম্পর্কটা যে অস্বাভাবিক নয় সেটা তো আগে আইনগতভাবে স্বীকৃত হোক। ভিতটাই ওরা মিথ্যা বলছিল সেখানে বাড়ি তোলার কথা ভাবি কি করে বলো?
- বুঝলাম
- আর তাছাড়া আরেকটা জিনিসও আছে, আমরা মাথা তুলে বাঁচতে পারব, অন্তত আইনের চোখে তো আর অপরাধী রইলাম না!
- কিন্তু তোর মনে হয় সমাজ এত তাড়াতাড়ি মেনে নেবে?
- তা নেবে না, তবে আগের মত অত রিজিডিটিটাও নেই কিন্তু, একটু খেয়াল করবে। এর জন্যে অবশ্যই মিডিয়া একটা বড় রোল প্লে করেছে। নানা ডিবেট, সিনেমা, আলোচনার মাধ্যমে ইস্যুটাকে বহুবার ফোরফ্রন্টে নিয়ে আসা হয়েছে, এটাও একটা বড় লিপ। তবে কি একটা জড়তা থাকবেই, বিশেষ করে আমাদের মত অর্থোডক্স সোসাইটিতে। কত গে ছেলে বিয়ে করে তথাকথিত স্বাভাবিক জীবনযাপনের মাশুল দিচ্ছে তুমি জানো? কি অসুখী যৌনজীবন কাটায় ওরা ভাবলে তুমি অবাক হয়ে যাবে। তার একটা বড় কারণ আমাদের বাবা-মায়েরা। সব বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকবে। আর ওই একটা কথা প্রচলিত আছে না, "বিয়ে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে"... কত মানুষের জীবন যে ছারখার করেছে এই ভয়ংকর দর্শন বাপ রে বাপ! কোনো রকমে ঠেকনা দিয়ে চলে, মেয়ে বোঝায় তার স্বামী রামকৃষ্ণের মত যৌনগন্ধহীন, সরি কিছু মনে কোরো না রামকৃষ্ণের নাম নিলাম বলে, আসলে শুনেছি তো, গা-পিত্তি জ্বলে যায়, রামকৃষ্ণ এই পাগলামী আর যৌনতাহীন সম্পর্কটাকে একটা আর্টের জায়গায় নিয়ে চলে গেছেন, ওনার যৌনতা নিয়েও এরকম একটা ইঙ্গিতে বই লেখা হয়েছিল জানো তো? স্বামীজির শিষ্য খ্রীষ্টফার ইশারউড তো প্রকাশ্যেই নিজের সমকামিতাকে মেনে নিয়েছিলেন, তখনকার দিনে... ভাবো?... যা হোক অন্যদিকে চলে যাচ্ছি, যা বলছিলাম, এই জোর করে বিয়ে দিয়ে... একটা ঘটনা বলি, মাঝে আমি বরানগরের একটা ছেলের সাথে ডেটিং করছিলাম, ছেলেটার নাম বললাম না। আমরা একদিন মিট করব উল্টোডাঙা স্টেশানের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে, ছেলেটা আমায় মেসেজ করল ওর আসতে ঘন্টাখানেক দেরি হবে। ভালো কথা অপেক্ষা করছি... বাবু এলেন দেড় ঘন্টা পরে... কারণ শুনলে অবাক হয়ে যাবে... মেয়ে দেখতে গিয়েছিল মায়ের সাথে বিরাটিতে। আমার মাথা গরম হয়ে গেল, বললাম, মানে? সে হেসে বলল, কুল ইয়ার... বাঙালি মেয়েদের পটানো কিচ্ছু না এমন, একটু সেন্টু মেরে চললেই মালগুলো তোর সাথে মাখোমাখো হয়ে কাটিয়ে দেবে... একটা বাচ্চা বানানো এমন কি আর বস... চোখকান বুজে লাগিয়ে দাও... ব্যস... খাল্লাস... তারপর ওদিকে কর্তব্য এদিকে মস্তি... আরে বাবা-মা সমাজ খুশ... আমরাও...আমার কান্না পেয়ে গিয়েছিল জানো সৌরভদা...
(ছেলেটা অন্যমনস্ক হল। এককালে আমার ছাত্র ছিল। এখন ভালো চাকরি করে একটা। একটা নীল টিশার্ট আর জিন্স পরে আমার সামনে চেয়ারে বসে। ফর্সা চেহারা, রোগাটে গড়ন যাকে স্লিম বলে। কথা বলতে বলতে চোখটা চিকচিক করে উঠল, বুঝলাম কাঁটাটা উপড়ায়নি এখনও, কিম্বা উপড়ালেও ক্ষতটা কাঁচাই আছে, আমি প্রসঙ্গ বদলালাম)
- তোর স্টেডি রিলেশান হল কারোর সাথে?
- উফ, তুমি বারবার ভুলে যাও... বলেছিলাম না যাদবপুরের সেই ছেলেটার কথা...
- ও হ্যাঁ বলেছিলি... সে তো প্রায় তিন বছর আগের কথা!
- তো?...
- সরি... ভুলে গিয়েছিলাম... তোদের অসুবিধা হয় না মানিয়ে নিতে?
- দেখো ওর বাড়ি, আমার বাড়ি দুইবাড়িই কঞ্জারভেটিভ... সো ন্যাচারেল যে কোনো বাড়ির লোকই মানবে না... আমরা আলাদা থাকব ইন ফিউচার ঠিক করেছি... অ্যাজ সাচ দমদমের ওদিকে একটা ফ্ল্যাটও পেয়েছি...
- হুম
- তোমায় নেমন্তন্ন করব আমাদের গৃহপ্রবেশে... কারণ আমাদের গার্জিয়ান বলতে আর কে হবে বলো?
- আচ্ছা সে না হয় যাবো... আমায় একটা কথা বল... এইটা ডিক্রিমিনালাইজেশান হয়ে গেলে তোর মনে হয় ছেলে বা মেয়েদের, যারা এই ওরিয়েন্টেশানের তাদের বিয়ে করে বাবা-মা-সমাজকে খুশি করার প্রবণতাটা কমবে?
- কিছুটা তো অবশ্যই, একটা সেলফ কনফিডেন্স তো গেইন করবেই তাই না?... তাছাড়া বিয়েটা তো করে একটা সোশ্যাল সিকিউরিটির জন্যেও বলো... সেদিকে তাকিয়ে আরো অনেকটা রাস্তা হাঁটার বাকি... আরেকটা কথা প্রপার্টির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রটাও তো পরিষ্কার হবে না যতক্ষণ না একটা আইনত বিয়ের কথা হচ্ছে... সেই দিক থেকে একটা সমস্যা থেকেই যাচ্ছে, তবে হোপ সো... এই ফাঁড়াটা কেটে যাক... পরেরটা নিয়ে এত সমস্যা হবে না...
- হুম
- কি ভাবছ? সম্পত্তি নিয়ে হঠাৎ কেন কথা তুললাম?
- না তা না, সেটা তো একটা বাস্তব দিক বটেই... ভাবছি এতটা কঠিন রাস্তা হাঁটলি কি করে একা?
- (একটু চুপ থেকে বলল) আসলে নিজেকে ঠকাতে চাইনি জানো তো... সুখী হই না হই... ভণ্ডামি করে জীবন কাটানোর মত অভিশাপ কিচ্ছু নেই... কত মানুষকে দেখে বুঝতে পারি জানো... অথচ কিরকম একটা মুখোশ পরে জীবনটা কাটিয়ে দিচ্ছে... যেন অন্যের স্ক্রিপ্টে অভিনয় করছে মনে হয়... কি অসামঞ্জস্য অপরিণত চোরের মত ব্যক্তিত্ব... সব সময় সব বিষয়ে নিজেকে ডিফেণ্ড করে যাচ্ছে... বয়েস বাড়ার সাথে সাথে এটা হয়... যা নিজে নয় তা কাঁহাতক সেজে থাকা যায় বলো... রিকি মার্টিনের কথা ভাবো... কি আশ্চর্য না..., উনি আমার বিরাট ইন্সপিরেশান জানো...
- বুঝলাম, খুব পেকেছিস...
- তুমিও, চুলে রঙ করোনি, সারাদিন পড়িয়ে যাচ্ছ... আন্টি বেঁচে থাকলে তোমার এমন সাধুগিরি ঘুচিয়ে দিত...
আমি অবাক হয়ে ওকে দেখছি... কতটা লড়াই করেছে নিজের সাথে নিজে সে ও নিজেই জানে... চলে যাওয়ার সময় জিজ্ঞাসা করলাম, এই কথাগুলো লিখব? কিছু মনে করবি?
গালে একটা চুমু খেয়ে বলল, আমিও তো চাই তুমি লেখো... ভালো থেকো, নিজের যত্ন নিয়ো...