সারাদিন মাথার মধ্যে কাটাকুটি খেলতে খেলতে মানুষটা ভুলে গিয়েছিল, তার বুকের মধ্যে একটা টব রাখা ছিল। সেই টবের মধ্যে একটা বীজ সদ্য অঙ্কুরিত হচ্ছিল। মানুষটার জল দেওয়ার কথা ছিল। সার দেওয়ার কথা ছিল। গাছটা বড় হলে তার ডালে অনেক পাখির বাসা করার কথা ছিল। কিছু ফল ধরার কথা ছিল। কিছু ফুল ফোটার কথা ছিল।
হঠাৎ একদিন একটা আওয়াজ শুনে লোকটা ধড়মড়িয়ে ঘুম থেকে উঠল। তখন মধ্যরাত। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল তার সারা বিছানা মাটি আর মাটি। বুকের ভিতর হাতড়াতে গিয়ে দেখল, টবটা নেই। বুকের কার্ণিশে ঝুঁকে দেখল টবটা অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে মিলিয়ে গেল।
মাথার মধ্যে ভর্তি কাটাকুটি খেলা দাগ। রক্তনদীর মত বয়ে যাচ্ছে। কয়েকটা পাখি এদিক ওদিক উড়ে বেড়াচ্ছে। লোকটা ডাকতে সাহস পেল না। কোনো পাখিই কাছে এলো না লোকটার। একটা পর্দা উড়ে গেল। লোকটা ছিটকে পড়ল কোথাও একটা, একা। মাথার মধ্যের সমস্ত কাটাকুটি দাগ জালের মত তার দিকে ধেয়ে এল। অন্ধকারের মধ্যে যেন জম্মাচ্ছে অন্ধকার। চারদিকে শুধু কাটাকুটির আওয়াজ। লোকটা জিজ্ঞাসা করল, "আমি কোথায়?" বুকটা চিরে গেল মনে হল মুহূর্তে। তার কাটা কাটাকুটিরা সার দিয়ে তার বুকের মধ্যে নামছে। লোকটা মারা গেল।
চারদিকে পাখির ডাক নেই। শীতল বাতাস নেই। ফুলের গন্ধ নেই। ক্ষুধার্ত মানুষের ফল নিয়ে ফেরা আশীর্বাদ নেই।
একটা পাখি উড়তে উড়তে বাতাসকে বলল, কাটাকুটি খেলতে খেলতে কিসের নেশায় যে পেল ওকে, হারিয়ে গেল, একা।
বাতাস শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, হুম। যেন গ্রীষ্মের দুপুরের আত্মমগ্নতা।