সৌরভ ভট্টাচার্য
1 January 2019
- এত ভিড় কেন গা?
- আজ্ঞে আপনার জন্য
- আমার জন্য? কেন গা?
- না মানে আপনি কল্পতরু হয়েছিলেন না, সেই জন্যে
- কবে?
- সে মেলা বছর আগে, এই পয়লা জানুয়ারি
- ও মনে পড়েছে, তা সে তো চৈতন্য লাভের জন্য প্রার্থনা করেছিলুম মায়ের কাছে, কয়েকজন ভক্তের জন্য।
- সে তো আছেই ঠাকুর, তা ছাড়া কয়েকজন ভক্তের বুকে হাত দিয়ে তাদের ইষ্টদর্শন করিয়েছিলেন।
- হুম, অমন একটা কিছু হয়েছিল না?
- হ্যাঁ ঠাকুর
- আচ্ছা, এই বড় বড় লাঠিতে মুখ রেখে ওরা কি বলছে?
- ওগুলো মাউথপিস ঠাকুর। ওতে কথা বললে লোকে দূর থেকে বসে এই যে শুনতে পাচ্ছে...
- ও আচ্ছা... আচ্ছা... তা ওরা কি আমায় নিয়ে কথা বলছে?
- হ্যাঁ ঠাকুর
- লোকশিক্ষা?
- ঠিক তা না, আপনার জীবনী বাণী ইত্যাদির আলোচনা
- ওতে কিছু হয়?
- শান্তি পায় মানুষ
- শান্তি কি বাসনা থাকতে পায় রে মানুষ... আমি বাহ্যে যাব...
(কিয়ৎক্ষণ পরে)
- ওরা কীর্তন গাইবে না? নাচ হবে না?
- না ঠাকুর, একটু পর আরাত্রিক হবে
- ওই নরেনের গানটা তো? বড্ড কঠিন করে লিখেছে, সুরটাও বেশ খটমট... শক্ত লাগে। তা আজকে যারা এসেছে, এরা সব সাধনা করে? কলিতে এমনিই সাধনভজন নাই... অন্নগতপ্রাণ...
- কেউ কেউ বেশ জপধ্যান পাঠ আলোচনা করে
- আর কামিনী-কাঞ্চন? ত্যাগ করেছে?
- কেউ কেউ হয়ত চেষ্টা করে
- হুম..., এ সবই তো দেখছি বেশিরভাগ কলাইয়ের ডালের খদ্দের...
- হুম, চারদিকে তো চালকলা বাঁধা শিক্ষারই বহর... কে আর বৈরাগ্যে মন দেবে ঠাকুর...
- বৈরাগ্যে কি কেউ মন দেয়, বৈরাগ্য তো ঈশ্বরে অনুরাগ হলে আপনিই জন্মায়
- কিন্তু সে ঈশ্বরে বিশ্বাস কই?
- তবে যে এত মানুষ... বুঝেছি জ্যোতিষীতে যেমন বিশ্বাস... লেগে গেল গেল... তাই তো...
- ওই একরকম আর কি....
- থাক, বরং গঙ্গার দিকে চলো... একটু নিরিবিলিতে যাই...
(নিরিবিলিতে)
- ওরা কি কারণবারি পান কচ্চে?
- হুম ঠাকুর...
- ওগুলোন কি পুলিশের গাড়ি...
- হুম
- এত পুলিশ কেন?
- চারদিকে ভীষণ অপরাধ যে আজকাল... ধর্ষণ, খুন...
- থামো থামো... আমি যাই...
- আমাদের কি হবে ঠাকুর?
- চৈতন্য না হলে কিচ্ছুই হবে না
- চৈতন্য হয় কি করে?
- লোভ গেলে... তোমাদের যে ভীষণ লোভ... ইহকালের ও পরকালের...
সব অন্ধকার হয়ে গেল। একটা ঠাণ্ডা বাতাস শিরশির করে বইছে। সন্ধ্যা হয়েছে। গঙ্গার কুলকুল শব্দ কানে আসছে। সেই গঙ্গা। কে বলবে হিমালয় থেকে শুরু হয়েছিল যাত্রা... মানুষের নোংরামিতে..... হঠাৎ কানে এলো... 'তোমাদের যে ভীষণ লোভ.... ইহকালের ও পরকালের...'