অনবরত বৃষ্টি পড়ছে। জানলা দিয়ে ছাট আসছে। তবু বন্ধ না করে মোটা চশমাটা চোখে লাগিয়ে হাঁ করে বৃষ্টিভেজা রাস্তা দেখছে।
ফোন বাজছে। তুলছে না। পাশের ঘর থেকে মা এসে বলল, বাবু ফোনটা ধর... মাসি তো...
ফোন কেটে গেছে।
একি রে... বিছানাটা ভিজে গেছে তো রে.....
জানলাটা বন্ধ করতে যেই পাল্লায় হাত পড়েছে, চুড়িগুলো কেঁপে উঠেছে... সে চীৎকার করে বলল.... মা থাক..... থাক... আমি বৃষ্টি দেখছি.....
মা চলে গেল। বিছানাটা ভিজে গেছে।
রান্না শেষ।
বাবু স্নান করবি না?.... একটা বাজে যে রে!....
বাজুক।
মা স্নান করে, ভাত বাড়তে বসল। খাবি আয়.... আয়....
চশমাটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলল। মাথাটা ভিজে বিছানায় ঠেকিয়ে বলল, খাব না... খাব না.... খাব না... তুমি মিথ্যুক... কই আমাকে নিতে এলো....
কে নিতে আসবে?
রঞ্জনরা.... খেলায়... কেউ ডাকে না আমায়.... কেউ না.... দেখো ওরা মাঠে ভিজে ভিজে ফুটবল খেলছে.....
মা উঠে এসে ভিজে বিছানায় বসল। বলল, বাবা ওরা যে তোমার চাইতে অনেক ছোটো....
আমিও তো ছোটো...
হ্যাঁ... কিন্তু ওরা তো মনে করে না....
না... না.... না..... তুমি বারণ করে দিয়েছ....
আচ্ছা। ভাত খেয়ে নে। আমরা নৌকা বানাব। পিছনের পুকুরটায় ভাসাবো। হবে?
তুমি না, আমি ভাসাবো.... তুমি বানিয়ে দেবে....
দুপুর হল। এখন সে ঘুমে। ওষুধের ঘুম। পুকুরের উপর অঝোরে নামছে বর্ষা। তালগাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে ভিজছে। যেন সে। তাকেও যেমন ভিজতে হচ্ছে। দাঁড়িয়ে। নিরুপায়। অসহায়। খাটের উপর রাখা কতগুলো নৌকা। যদি ঘুম ভেঙে যায়। যদি চায়। দেওয়ার মত কি আছে, কাগজের নৌকাই তো। আসল নৌকার মত। ভাসে। যায় না কোথাও।