ভ্যানের চাকাটা কাদায় ডুবে গেল। তোলা যেত। কিন্তু তুলল না। মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকল। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে চারটে বাচ্চা নিয়ে একটা কুকুর এরই মধ্যে ভ্যানের তলায় এসে দাঁড়িয়েছে। চারদিকে একটা গাছও নেই যে তার তলায় সে গিয়ে দাঁড়ায় ভ্যানটা এখানে রেখে। বাচ্চাগুলো থরথর করে কাঁপছে ঠাণ্ডায়। একটু পরেই সন্ধ্যে হবে। আরো ঠাণ্ডা বাড়বে। তারপর? সারাটা রাত এখানে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকা যায় নাকি?
বেলা যত বাড়তে লাগল তার দ্বিধা তত বাড়ল। একটা মানুষও এ রাস্তা দিয়ে গেল না যে ডাকবে। সাহায্য চাইবে।
সন্ধ্যে নামল। কী আশ্চর্য দেখতে দেখতে মেঘ কেটে তারাও বেরিয়ে গেল। ভ্যানটা ধীরে কাদা থেকে তুলে বাড়ি পৌঁছালো। ফিরতে রাত হল অন্যদিনের চেয়ে।
বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভাঙল। রাত অনেক। বৃষ্টি নেমেছে আবার। দুশ্চিন্তা হল। কী করছে বাচ্চাগুলো নিয়ে? আশ্রয় পেল? বারবার মনে হল ওরা যেন তার বাড়ির সামনে এসেছে। বলছে দরজাটা খুলে দিতে। কিন্তু কই? কেউ তো নেই।
ভাবতে ভাবতে কখন আবার ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম ভাঙল যখন বাইরে আলো ঝলমল করছে। ভ্যান নিয়ে বেরোলো। রাস্তা একই। যেতে যেতে কুকুরগুলোকে খুঁজল। পেল। তাকে দেখেই বাচ্চাগুলো দৌড়ে এলো। সে বলল, কাল রাতে কোথায় ছিলি? তারা ভ্যানের চাকার চারপাশে ঘুরঘুর করতে করতে উঠতে চাইল ভ্যানে। তুলে দিল সে। এবার? সে উঠল সিটে। প্যাডেলে চাপ দিল। তাদের মা কোথায়? হঠাৎ সব ক'টা বাচ্চা একসঙ্গে ডাকতে শুরু করল। ওই তো ওদের মা আসছে। দৌড়ে দৌড়ে এসে দাঁড়ালো তার পাশে। ইতিমধ্যে বাচ্চাগুলো চালকের আসনে বসা তার পিঠে উঠতে চাইছে। কী করবে? নামিয়ে দেবে? আবার দ্বিধা। কী মনে হল, প্যাডেলে চাপ দিল। ভ্যান গড়ালো। মা সঙ্গে সঙ্গে চলল। ভ্যান থামলে সেও থামল। ভ্যান চললে সেও চলল। কোথায় যেতে চাইছে? কেউ জানে না। যে চালাচ্ছে সেও না। যারা যাচ্ছে তারাও না। শুধু জানে, যেতে হবে একসঙ্গে। কেন? কেউ জানে না।