Skip to main content

 

ক্ষিতিমোহন সেন কবীরের বাণী সংগ্রহ করেছিলেন অক্লান্ত পরিশ্রম করে। রবীন্দ্রনাথের আগ্রহ ছিল এ কাজে। রবীন্দ্রনাথের লেখায় কবীরের প্রসঙ্গ বারবার এসেছে। এমনকি রামকৃষ্ণ মিশনের অনুষ্ঠানে, রবীন্দ্রনাথ যেখানে সভাপতিত্ব করেছিলেন, একদম শেষ বয়েসের দিকে এসে, সেখানেও কবীরের বাণী দিয়ে ভাষণের ইতি টেনেছিলেন। এক কথায় কবীরকে বিশ্বের দরবারে রবীন্দ্রনাথই ওঁর একশোটা কবিতার অনুবাদে পৌঁছে দেন বলা যায়। এই গানটা ক্ষিতিমোহন সেনের বই থেকেই নেওয়া।

"সাধো দেখো জগ বৌরানা। সাঁচ কহো তো মারন ধারৈ ঝুঁঠে জগ পতিয়ানা।

হিন্দু কহত হৈ রাম হমারা মুসলমান রহিমানা। আপস মে দোউ লড়ে মরত হৈঁ মরম কোই নহি জানা ॥

ব    হুত মিলে মোহি নেমী ধর্মী, প্রাত করে আস্নানা। আতম ছোড়ে পষানৈ পূর্জৈ, তিনকা থোথা জ্ঞানা ॥

পীতর পাথর পূজন লাগৈ, তীরথ বর্ত ভুলানা। মালা পহিনে টোপী পহিনে, ছাপ তিলক অনুমানা ॥

সাথী শব্দৈ গাৱত ভুলে, আতম জ্ঞান নজানা। ঘর ঘর মন্ত্র জো দেত ফিরত হৈঁ, মায়াকে অভিমানা। গুরুরা সহিত শিষ্য সব বুড়ে, অন্তকাল পছতানা ॥

বহুতক দেখা পীর ঔলিয়া, পঢ়ে কিতাব কুরানা। করৈ মুরীদ কবর বতলাবৈ, উনই খুদান জানা !!

হিন্দুকী দয়া মেহর তুরকন কী, দোনোঁ ঘরসে ভাগী। বহ করে জিবহ বহ ঝটকা মারৈ, আগ দোউ ঘর লাগী।

যা বিধি হসত চলত হৈ হমকো আপ কহাৱৈ স্যানা কহৈঁ কবীর সুনো ভাই সাধো ইন মে কৌন দিবানা।

======= ========= ==========

হে সাধু, দেখ জগৎ কেমন পাগল। যদি সত্য কথা বল তবে তোমাকে মারিতে চাহিবে, যদি মিথ্যা বল তো বিশ্বাস করিবে। হিন্দু বলেন, আমার রাম, মুসলমান বলেন আমার রহিম- পরস্পরে উভয়ে মারামারি করেন অথচ মর্মকথা কেহই বুঝিলেন না। আবার ধর্মও বিধিরপালক নিত্য প্রাতঃস্নায়ী অনেক দেখিয়াছি। তাঁহাদের জ্ঞান স্থূল, কারণ তাঁহারা পরমাত্মাকে ছাড়িয়া পাষাণকে পূজা করেন। কেহ বা পিত্তল মূর্ত্তি পাষাণমূর্তি পূজা করেন, তীর্থব্রতে কেহবা ভ্রান্ত রহিয়াছেন, কেহ কেহ বা মাল্য ধারণ করেন, টুপী পরিধান করেন, ছাপা তিলক করেন, দোঁহা জপ করেন, ভজন গান করেন- কেবল জানেন না পরমাত্মাকে। ঐ যে মিথ্যা অভিমানে মত্ত হইয়া ঘরে ঘরে মন্ত্র দিয়া ফিরিতেছেন- শিষ্যের সহিত সেই গুরু রসাতলে যাইতেছেন- অন্তকালে পরিতাপ হইবে। পীর ফকীরও বহুত দেখিয়াছি- কেহবা ধর্মগ্রন্থ কেহবা কোরাণ পড়েন তাঁহারা সবাই শিষ্য করেন- গুপ্তবার্তা বলেন- অথচ ঈশ্বরকে জানেন না। হিন্দুর দয়া মুসলমানের করুণা উভয়ের ঘর হইতে পলাইয়াছে। একজন বলি দেয় অন্যজন জবাই করে- উভয়ের ঘরেই আগুন লাগিয়াছে। তাঁহারা নিজেদের বুদ্ধিমান মনে করেন এবং আমাকে উপহাস করেন। কবীর কহেন, হে সাধু, ইঁহার মধ্যে কে পাগল আমাকে বল?"

মহাত্মা একটা রক্ষাকবচের কথা বলতেন। যদি তুমি সিদ্ধান্তহীনতায়, সংশয়ে, দ্বন্দ্বে ভুগছ, যদি তোমার অভিমান ভাঙতে না চায়, তোমার দেখা দরিদ্রতম অথবা দুর্বলতম মানুষটার কথা মনে করে দেখো। তোমার নেওয়া সিদ্ধান্ত তাকে কীভাবে উপকৃত করতে পারে দেখো।

মহাত্মার কথাটা করুণার কথা। অনুকম্পার কথা। কবীরের গানে এ বাণীরই আলো।

এই ছেলে দুজন, আভাস আর শ্রেয়স, এমন অসাধারণ গাইছে কবীর, মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের এ সম্পদকে আবার করে আবিষ্কার করা ভীষণ দরকার। নইলে শিকড় উপড়ে যাবে। আর কবীর তো গভীরতম শিকড়।

 

LINK: https://www.youtube.com/watch?v=5Q4KsztawP0