কোন দেশের গল্প বলতে পারবো না। সেসব প্রশ্ন যদি কেউ করে, এমনকি উইকিপিডিয়ার ঠাকুরদার পায়েও যদি মাথা কুটে মরে তো সে তথ্য পাবে বলে মনে হয় না। তাই সেসব কথা ছেড়ে মূল গল্পটায় আসি।
তখন ঘড়ি বলতে লোকে বুঝতো শুধু বালিঘড়ি। তো আমাদের গল্পের যে নায়ক তার ছোটবেলার কথা কয়েকটা বলে নিই, সে নাকি একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, মা আজ তারা কম উঠেছে যেন। তার কয়েকশ বছর পর জানা গিয়েছিল সেদিন রাতে সত্যিই একটা তারা ধ্বংস হয়েছিল। তারপর একদিন নদীর ধারে বলল, মা, আজ এত পরিমাণ জল নদীতে কম মনে হচ্ছে। নিন্দুক বলবে জল কম তো চোখে দেখেই বোঝা যায়! আহা সে না হয় হল, কিন্তু পরে জানা গিয়েছিল ওদের দেশে যখন মিউনিসিপালিটি হয়েছিল ওই মাসে নাকি অত কিউসেক জল কম যায়। তো স্বাভাবিকভাবেই সবাই ঠাওর করে নিয়েছিল যে, এ বড়ো হয়ে মস্ত কিছু একটা হবে, আর হলোও তাই।
ঘটনায় আসি, এর যখন ২৫ বছর বয়েস তখন এ একটা যুগান্তকারী জিনিস আবিষ্কার করে ফেলল, দম দেওয়া ঘড়ি (উইকিপিডিয়ায় দম দেওয়া ঘড়ির আবিস্কর্তা বলে যার নাম আছে সেটা ঠিক নয়কো, এটা হল গিয়ে বিশ্বাসের কথা, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু...)। তো চারদিকে হই হই পড়ে গেল, কয়েক হাজার মিস্তিরি নিয়ে ঘড়ি বানিয়েই চলে বানিয়েই চলে, আর দেশ বিদেশে নিমেষের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়। তার তিন ছেলেও ব্যবসায় সমান পারদর্শী হয়ে উঠল। তবে ওদের অত সূক্ষ্ম বুদ্ধি ছিল না। ঘড়ি বানিয়ে বাবার কাছে যেত, আর বাবা বড়ো কাঁটা ছোট কাঁটা ঘুরিয়ে ঠিক করে দিত।
আচমকাই এই প্রবল প্রতিভাবান মানুষটার হৃদযন্ত্র বিগড়ে মলো। যেই না মরলো ওমনি ছেলেদের মধ্যে শুরু হল বিষয়ের বিশাল কোঁদল - অবশ্যই সম্পত্তি নিয়ে। তো যা হোক, কয়েক মাস লড়ে বড়ো ছেলে শহরের দক্ষিণে, মেজ ছেলে শহরের পশ্চিমে, আর ছোট ছেলে শহরের পুবে একটা করে ঘড়ির দোকান খুলল। মুশকিল হল, সবাই বাবার তৈরী ঘড়ির একটা একটা করে নিয়ে রওনা দিয়েছিল, কিন্তু মাঝপথে বড়ো ছেলের ঘড়ির ঘণ্টার কাঁটা, মেজ ছেলের ঘড়ির মিনিটের কাঁটা আর ছোট ছেলের ঘড়ির ৯ আর ৬ গেল উলটে। এই অবস্থাতেই ওরা যে যার ঘড়ির দোকান শুরু করলো। ফলে বড়ো ছেলের কোম্পানীর ঘড়ির বড়ো কাঁটা থাকলো না, মেজ ছেলের কোম্পানীর ঘড়ির মিনিটের কাঁটা থাকলো না, আর ছোট ছেলের ঘড়ির ৯/৬ উলটো বসলো।
সেদিন থেকে ওই শহরে আর আশেপাশের শহরে তুমুল গোল বাঁধল কার সময় ঠিক তা নিয়ে। এমনকি কত প্রাণও যে গেল তার ইয়াত্তা নেই। কেউ একজন বলল, তোমরা সূর্যের সাথে মেলাও না কেন? আবার গোল বাঁধল। সূর্যের গতিবিধিও তো কেউ ঠাওর করতে পারে না। এ বলে সূর্য আমার মাঠের পেছনে ওঠে; ও বলে মোটেও না, সূর্য তো বড়ো দিঘীর পেছন থেকে ওঠে; আরেকজন বলল, ডাহা মিথ্যুক। সূর্য আমাদের হাগার ঘরের পেছন থেকে ওঠে। আবার গোলমাল শুরু হল।
গল্পটা মোটামুটি এখানেই শেষ। আসলে আপনারা এসব খবর তো আর রাখেন না। আপনারা খালি কোন ধর্মের কোন লোক কার সাথে মারামারি করছে সেই সব খবর নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। যা হোক আমি বলে রাখলুম আপনারা পড়ুন, আমি ততক্ষণে বাইরের দরজাটায় খিল লাগিয়ে আসি। আসলে আমার পাড়াতেও তো নানা মতের ঘড়ি।