Skip to main content

পদা আজন্ম শুনিয়া আসিতেছে একটি তৃণও ঈশ্বরের ইচ্ছা ছাড়া নড়ে না। একটি পিপীলিকার চরণে বাঁধা নূপুরের ধ্বনিও ঈশ্বর শুনেন।
        পদা যত বড় হইতে লাগিল তত বিস্মিত হইতে লাগিল। এত নৃশংসতা, এত অমানবিকতা, এত বুভুক্ষা কেন তবে?
        পদা ইতিহাস পড়িল, দর্শন পড়িল। দেখিল অতীতে বহু মানুষ এর উত্তর খুঁজিয়াছে। কেহ বলিয়াছে কর্মফল, কেহ বলিয়াছে লীলা, কেহ বলিয়াছে ভবিতব্য।  কখনও দায়ী করিয়াছে ঈশ্বরকে, কখনও মানুষের অশুভবুদ্ধিকে। পদা বিভ্রান্ত হইয়াছে।
        পদা আরো খোঁজখবর লইয়া জানিল, ঈশ্বরের কার্য কিছু বোঝা যায় না। কিন্তু তাহার অসীম প্রেম, অসীম করুণা অনুভব করা যায়।
        পদা খবরের কাগজ পড়া বন্ধ করিল। টিভিতে খবর দেখা বন্ধ করিল। পদা এদিক ওদিক তাকানো বন্ধ করিল। অকারণ কথা বলা বন্ধ করিল। কটু সত্য শোনা বন্ধ করিল। যার তার সাথে মেশা বন্ধ করিল।
        পদা সারাদিন সুন্দর সুন্দর বাণী পড়ে। সুন্দর ছবি আঁকে। মন্দির-মসজিদ-চার্চ-বৌদ্ধ বিহার-গুরুদুয়ারে যায়। একবেলা হবিষ্যি করে। প্রাণপণে বীর্যধারণ করিবার চেষ্টা করে। সপ্তাহে অন্তত চারটি করিয়া ব্রত করে। এক একটি ধর্মগ্রন্থের পারায়ণ করিয়া মাস অতিবাহিত করে। পদা দীক্ষা লইয়াছে। ক্রমশঃ হৃদয়ের একটার পর একটা স্তর অতিক্রম করিয়া ঈশ্বরের জ্যোতি অন্বেষণ করিতেছে। ধ্যানে স্বপ্নে নানা দেবদেবী দর্শন করিতেছে। দেবদেবীরা তাহার কাছে এটাওটা বায়না করে। পদা তাহার জোগাড় যন্ত্র করিতে লাগিয়া যায়।
        পদা বুঝিয়াছে, ইহা কলিকাল। জীবের এ দুর্গতি অবশ্যম্ভাবী। জীব স্বেচ্ছাচার হইয়া তাহার এই দুর্দিনকে আনয়ন করিয়াছে। ইহাতে ঈশ্বরের কোনো হাত নাই। ইহা শয়তানের ষড়যন্ত্র। পদা শয়তানকে খুঁজিয়া পাইয়াছে।


পদা সিদ্ধিলাভ করিয়াছে। পদার শিষ্যশিষ্যার সংখ্যা বাড়িতেছে প্রত্যহ। পদার চোখে সত্য-শিব-সুন্দর সদা জাগ্রত এখন। পদার চোখে সব কিছু অমিলন, পবিত্র, আনন্দের প্রতিরূপ। পদার এখন ঘনঘন চোখে জল আসে। কেহ বিন্দুমাত্র দুঃখের কথা কহিলে কাঁদিয়া আকুল হয়। কাঁদিতে কাঁদিতে মনের মধ্যে প্রসন্ন হয়, এই তো সাধনার পরম সিদ্ধাবস্থা! জীবের দুঃখে কাতর হওয়া। পদার ইদানীং বোধ হইতেছে তাহার মধ্যে ঈশ্বরের বিশেষ যুগকার্য সম্পাদনার বীজ আছে।
        পদার শিষ্যেরা পদার মধ্যে যুগাবতারত্ব দেখিতেছে। পদা বাহিরে লজ্জা পাইলেও, অন্তরে তাহার অন্তঃকরণের সমর্থন পাইয়াছে।


        পদা এখন রাতদিন ধ্যান করে। কাঁদে। কাঁদিয়া তৃপ্ত হয়। নিজেকে আয়নার সম্মুখে রাখিয়া ভালো করিয়া পর্যবেক্ষণ করে। যেন কিসের আভাস দেখে চোখে মুখে। মনে মনে আক্ষেপ করিয়া উঠে, আহা লোকে তাহাকে চিনিতেছে না কেন?
চিনিবে চিনিবে। কালে সবাই তাহাকে চিনিবে।

        পদা সত্য সত্যই অবতারত্বে ভূষিত হইল।

        নিন্দুক কহিল পদা উন্মাদ হইয়াছে, মেগালোম্যানিয়াক। ভক্ত কহিল, পাষণ্ড! উহা মহাভাব! পদা কহিল উহারা অর্বাচীন। ছাড়িয়া দাও। তোমরা হৃষিকেশে আমার জন্য আশ্রম রচনা করো।

        তাহাই হইল। পদা এয়ারপোর্ট যাইতে যাইতে দেখিল, কত দারিদ্র্য, কত অন্যায়, কত অবিচার। ঘোর কলি, সবই ইহাদের কৃতকর্ম। পদা এখন সর্বত্র ঈশ্বরের লীলা দেখে। জীবের মধ্যে আত্মা। আত্মার মধ্যে পরমাত্মা। বিমূঢ় জীব এসব বোঝে?

        পদার প্লেন দিল্লী উড়িল।