লোকটা জানত মারা যাবে। মারা তাকে যেতেই হবে। ব্যথার কথা বলে না। খিদে কমে যাওয়াটা লুকিয়ে যায়। অল্প বয়েসী মেয়েটার মাথায় সিঁদুরের দাগটা দেখলে বুকটা টাটায়। দুটো ঘুমন্ত বাচ্চার মুখে এসে পড়া স্ট্রিট লাইটের আলো, জানলার পর্দা উড়িয়ে ঘরের ভিতরে এসে জমে - সে দেখতে দেখতে আনমনা হয়। তাদের শ্বাসে ওঠানামা বুকের হাপরের নীচে খিদেয় জাগা ঘুমন্ত পেট, তার ঘুম কই? মারা তাকে যেতেই হবে।
মারা গেলে ওদের মুক্তি। তাই বলে আত্মহত্যা করবে? ছি! লোকে বলবে কাপুরুষ! তার ব্যবসার সব টাকা মেরে যে বড়লোক হল, তাকে খুন করে প্রতিশোধ নেবে? নিতেই পারত, তাই চেয়েওছিল। কিন্তু শ্বাসরোধ করাতেও পয়সা লাগে, পাপ জমানোর কলিজা লাগে, কই পাবে সে? খুনী বাপের মেয়ে হবে দুটো?
বিকালবেলা ছিপ নিয়ে পুকুরের ধারে গেল। তার পেটের ব্যথাটা বাড়ছে। টাটাচ্ছে। বমি হল। ভাত, শাক, চুনোমাছ কটা, বেরিয়ে গেল। মরা মাছটা পুকুরে ছেড়েই লোকটার মন খারাপ হল। আজ বহুদিন পর মন খারাপ হল। কান্না পেল। এমনিতে তার রাগই হয়, বিরক্তি লাগে। স্বপ্নেও সে রাগের স্বপ্নই দেখে। আজ মন খারাপ হল।
মরা মাছটা জলে ডুবল। বেঁচে থাকলে ডুবত কি? সাঁতার দিয়ে এ ঘাট, ও ঘাট ভেসে বেড়াত। ছিপে বিঁধত? নাও তো বিঁধত? আজ তার যুক্তিগুলো কচি পাতার মত সবুজ যেন? সে ছিপ ঘাসের উপর শুইয়ে রাখল। জামা, লুঙ্গি খুলেই পুকুরে নামল। সন্ধ্যে হয়েছে।
দৌড়ে দৌড়ে কে আসছে? ভুতোর গলা? "ও কাত্তিকদা.. ও কাত্তিকদা... তাড়াতাড়ি চলো, বউদি মনে হয় বিষ খেয়েচে"
কাত্তিকের গায়ে যেন মরা মাছটা ঠেকল। ঠাণ্ডা গা। এই দূরে যা! যা যা যা! জলের মধ্যেই বমি হল। সবুজ বমি? অন্ধকারে মনে হল। স্ট্রিট লাইটের আলোয় ফিরছে কাত্তিক, ভিজে গা, ভিজে মাথা।
এখন কাত্তিক কাজ করে। পেটে ব্যথা নেই। বমি নেই। মরারও নেই। সময় কোথায়? সে বলে, তার চে চালাক সে মাগী, হিরি, কালো কপাল ভরতি সিঁদুর, বন্ধ চোখ, শাঁখের আওয়াজ, জোনাকি পথ, একলা শ্মশান। সেই নিয়ে সে ভালোই আছে। তার আছে লাইটের কাজ, দুটো মেয়ে, আর....
এখনই না... তবু যেন হরিণ চোখ, নতুন পাড়ার মুদির মেয়ে...