Skip to main content

 

গঙ্গার ধার। সন্ধ্যে গড়িয়ে রাতের দিকে ঢল। খানিক আগেই বেণীমাধব শিবের মন্দিরে আরতি হয়ে গেল।

ত্রিবেণী শ্মশানের পাশেই ঘাট। ঘাটে সিঁড়ি নেমে গেছে গঙ্গায়। সিঁড়ির মাঝ বরাবর বসে কয়েকজন মহিলা। সামনে চাল, ডাল, পয়সা নেওয়ার থালা। যে যা দেয়।

এখন কেউ ডাকাডাকি করছে না। গল্প করছে। পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেও তাকাচ্ছে না।

একজন বৃদ্ধা এক হাতে প্লাস্টিক ভর্তি চাল নিয়ে এল। যারা বসে আছে তাদের প্লাস্টিকে অল্প অল্প করে ছড়াতে ছড়াতে বলল, কাল সব চাকলা যাচ্ছে না, লোকনাথবাবার মাথায় জল ঢালতে, ওদেরই একজন দিল।

একমুঠো চালের ভাগ পড়ছে তিন চারজনের প্লাস্টিকে। যেন দু এক পশলা বৃষ্টি। হঠাৎ একজন বৃদ্ধা চীৎকার করে বলল, আমাকে ও কী দিলি রে…. নাই দিতিস…. নিজে তো দু মুঠো গিলবি….

যাকে উদ্দেশ্য করে বলা, সে গায়ে মাখল না। একটা ফাঁকা জায়গার দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল, এ গেল কই? ওর প্লাস্টিকটা একটু খুলে দে না….

পাশেরজন বলল, না বাবা, যা মুখ ওর… ওদিকে গেছে…. সেরে আসুক…. তুমিই দিও….

তোর যেন কত মুখের ভয়? ননদ ছিল না?

ছিল…

একটু দূরের থেকে আরেক বৃদ্ধা বলল, নিজের ননদ? না লতায়পাতায়?

সে গলা চড়িয়ে বলল, নিজের… নিজের ননদ ছিল গো…..

তারপর সে আগেরজনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, লাগত তো…. খুব লাগত…. কিন্তু তবু তো নিজের ছিল…..…

ব্যস। গঙ্গায় হাওয়া কার পালে কী বাতাস দিল কে জানে….. সবাই চুপ করে গেল। ওদিকে শ্মশানে বাজছে খোলকরতাল। এক বৃদ্ধ শুয়ে। যা কিছু নিজের, সব ছেড়ে। কিম্বা হয় তো ছিল না কিছু।

একটু পর সেই ফাঁকা জায়গার মহিলা এলো। মাঝ বয়েসী। বসতে বসতে বলল, দুই মেয়ে এসেছে। কী সুন্দর দেখতে গো! ওই বুড়োর মেয়ে।

একজন বলল, মালতীদি… ওর চালটা দিয়ে দাও…..

মালতী মুখের মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে গুড়াকু মাজছে। ইঙ্গিতে তার প্লাস্টিকটা দেখালো। এক মুঠো চাল প্লাস্টিকের কোণায় অবশিষ্ট।

সে উঠে এসে মালতীর প্লাস্টিকে হাত ঢুকিয়ে চার আঙুল চাল নিয়ে বলল, একবার সবাই চাকলা গেলে হয় না?

কেউ উত্তর করল না। সে উবু হয়ে বসেই পেছনে ঘুরে বলল, চলো না…. যাই।

বৃদ্ধার দল তার মুখের দিকে তাকিয়ে। এমন অসম্ভব কথা বিশ্বাস করার সাহস নেই, নাকি এমন অসম্ভব কথা শুনে নিজের কানকেই বিশ্বাস করছে না, জানি না।

সে উঠে গিয়ে নিজের জায়গায় বসতে বসতে বলল, ভেবে দেখো।

সামনে একঝাঁক তীর্থযাত্রীর দল নামল ঘাটে। জল ভরতে। তাদের সামনে দিয়ে। উঠলও তাদের সামনে দিয়ে। জলের ছাপ রেখে রেখে। তাদের বাঁকে লাগানো ঘন্টার আওয়াজ, তাদের মুখে জাগা বাবাকে ডাকের আওয়াজ, সব মাখিয়ে তাদের ডেকে গেল যেন।