Skip to main content

 

কথায় আছে জলে কুমীর, ডাঙায় বাঘ।

জুনিয়ার ডাক্তারদের অবস্থানটাও তাই। দুটো শক্তিশালী রাজনৈতিক ক্ষমতাধারীদের মধ্যে, একজনের দিকে ক্ষুব্ধ চোখে আর আরেকজনের দিকে পিঠ ফিরিয়ে বসে থাকাটা চাট্টিখানি কথা নয়।

প্রতিবাদ শুধু না। প্রতিরোধের দায় বড় দায়। তারা শুধু যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন তা তো নয়, সঙ্গে সে অন্যায়ের শিকড়ের গতিকেও উপড়ে ফেলার শপথ নিয়েছেন। প্রতিবাদ একটা দূর অবধি এসে শান্ত হতে পারে, কিন্তু প্রতিরোধের দায় প্রবল। তাকে যেখানে সেখানে থামলে হয় না। এমনকি যখন কেউ এসে বলছে, এসো না আমিও সে শিকড় তুলে দিতে তোমাদের সাহায্য করছি... তাকেও তারা বলছে, গো ব্যাক। কারণ তার উদ্দেশ্য আর অভিসন্ধি নিয়ে তারা সন্দিহান।

প্রতিবাদ যারা করছেন সেখানে অনেকে এসে অপমানিত হয়েছেন। কারণ বড় জটিল কিছু নয়। কারণ নয় যে তারা কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে এসেছেন। কিন্তু ফেসবুকীয় দলাদলিতে তিনি প্রতিপক্ষ হওয়াতে তার গায়ে হাতও প্রায় উঠেছে। তিনি মহিলা হলেও। আবার প্রতিবাদ না করলে বা প্রতিবাদের বিরুদ্ধে কিছু বললে যেমন তাদের ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে হুমকি দেওয়া চলছে, তেমন প্রতিবাদ করলে ফটো বিকৃতি করে টাঙিয়ে দেওয়ার কথাও উঠছে। এটা স্বাভাবিক। ডাক্তারদের লড়াইটা প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের সমন্বয়ে দাঁড়িয়ে মরণ-বাঁচনের লড়াই, অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। বাকিটা অনেক ক্ষেত্রেই ফেসবুকের কল্যাণে। সেখানে "আমি" এসেই পড়ে। যে কোনো লড়াইয়ে "আমি"র থেকে, "আমরা" থেকে লড়াইয়ের উদ্দেশ্যটা সৎ আর ন্যায়সঙ্গত হওয়া উচিৎ। নইলে বড় অসঙ্গত অভিমান আর আক্রোশ তৈরি হয়। "আমি-আমরা" বড় হয়ে গিয়ে আসল কাজ পণ্ড হয়। আমি-আমরা মোক্ষমার্গ বলে শুধু না, যে কোনো কল্যাণের কাজে বড় সমস্যার। দল বাস্তব, কিন্তু দলাদলিটা ন্যাক্কারজনক।

ডাক্তারদের লড়াইটা আরো কঠিন হয়ে উঠছে আদালতে। কারণ গণতন্ত্রে বিচারের সেটাই অন্তিম আশ্রয়। এবং সর্বোচ্চও বটে। সেখান থেকে খুব একটা দরদী কিছু ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে না বলে অনেকের ক্ষোভ। সে ক্ষোভ অসংগতও নয়। সেখানে টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে, আরো অনেক বিধান যোগ হয়েছে। কিন্তু সব বিধান নির্ভর করে একজন মানুষের উপর, যিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত। তাই চিকিৎসকেরা আগে সেই মানুষের শুদ্ধিকরণের রাস্তায় নেমেছেন। এ ন্যায্য দাবী।

নোম চমস্কিকে একজন একটা সভায় জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ভায়োলেন্সের পথে যাচ্ছি না কেন। নোম বলেছিলেন, তাহলে সবাই সবার গালে একটা চুমু খেয়ে চিরকালের মত গুডবাই বলে বেরিয়ে যাও। কারণ শাসক সেটাই চায়। তুমি ভায়োলেন্ট হলে সে তার সৈন্যবাহিনী সাজিয়ে লড়াইয়ে নামে। তার সে ক্ষমতা তোমার থেকে অনেক বেশি। মণিপুর থেকে ইজরায়েল, রাশিয়া সেই রাস্তায় হেঁটে কী পাচ্ছে?

জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়ানোর সময় এখন। ভূয়ো খবরকে নস্যাৎ করে দেওয়ার সময় এখন। মিথ্যা যা কিছু তাকে ফ্যাক্ট দিয়ে চৌচির করে দিয়ে সত্যের রাস্তাটা সহজ করে দেওয়ার সময় এখন। এটা করতে গেলে এমন কিছু করতে হবে না, একটু ভালো করে খবরগুলো ফলো করা, অসঙ্গত যা তাকে সামনে তুলে ধরা, সেটাই সব চাইতে বড় কাজ এখন। এটা যদি সবাই মিলে করি, তবে মাইলকে মাইল জাস্টিস চেয়ে হাঁটার থেকে বড় কাজ হয় সেটা। এত মিথ্যা প্রচার কী করে হয় যদি জনগণ সচেতন হয়ে ওঠে? গণতন্ত্রের সব চাইতে বড় অস্ত্র ননভায়োলেন্স লড়াই। আর তার সঙ্গে চোখ কান খোলা রেখে সঠিক তথ্য খুঁটিয়ে পড়া, জানা আর মিথ্যা এলেই সামনে তুলে ধরা। জানি এ কাজটা কঠিন। আশু বাহবা পাওয়ার রাস্তাও নেই। কিন্তু এটাই করতে হবে। শুধু ফেসবুকে না, পাশের কেউ মনগড়া তথ্য দিলেই খ্যাঁক করে চেপে ধরতে হবে অথেনটিক তথ্য দিয়ে। আরো অথেনটিক হয়ে বাঁচতে শিখতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রতিবাদ বিবেকের বলিষ্ঠ সন্তান, আবেগের তরলমতি লঘুচিত্ত বালক নয়।