Skip to main content

 

 

 

 

 

 

জন ড্রাইডেন আর রবীন্দ্রনাথ। কত বছরের পার্থক্য? জন ড্রাইডেনের জন্ম ১৯শে অগস্ট ১৬৩১ সাল। রবীন্দ্রনাথ, ১৮৬১। মোটামুটি দুশো বছরের বেশি।

জন ড্রাইডেনের সম্বন্ধে আর নতুন করে কি বলা। কেউ কেউ বলেন শেক্ষকবির পরে নাকি উনিই যে উচ্চমানের নাটক লিখেছিলেন। সাহিত্যে জগতে একটা দীর্ঘ সময়কেই ‘ড্রাইডেন যুগ’ বলা হত, এমন দাপট এ কবির ছিল। ওদেশের প্রথম পোয়েট লরেটও উনি। সে যাক, ওনার সম্বন্ধে লিখব বলে কি আর লিখতে বসা? তা না। হঠাৎ এ দুই মহামান্য কবির দুই উক্তিতে একই ভাবের বা দর্শনের কেমন মিল পেলাম। রবীন্দ্রনাথ লিখছেন আশির ঘরে এসে, ড্রাইডেন লিখছেন প্রায় চুয়াল্লিশ বছর বয়সে।

কি মিল সেটা বলার আগে আরেকটা মজার কথা। ড্রাইডেনের এই লাইনটা রয়েছে “Aureng-zebe” নামক কাব্যনাট্যে। অনেকের মতে এটা নাকি ওনার শ্রেষ্ঠতম বীর-রসাত্মক কাব্য। নাটকটা ঔরঙ্গজেব, শাহাজানকে নিয়েই। নাটকটা প্রকাশিত হয় ১৬৭৫ সালে। মানে ঔরঙ্গজেব যখন ইতিহাস নন, রীতিমত ঘটমান বর্তমান।

এবারে আমার যে কারণে লিখতে বসা সেই কথাটাতে আসি। দুই মহাকবির লেখায় জীবনকে একই ভাষায় অলঙ্কৃত না তিরস্কৃত না ক্ষোভের প্রকাশ সে পাঠকই বলবেন।

ড্রাইডেন লিখছেন –

“When I consider Life, 'tis all a cheat;

Yet, fooled with hope, men favour the deceit;

Trust on, and think to-morrow will repay:

To-morrow's falser than the former day;

Lies worse; and while it says, we shall be blest

With some new joys, cuts off what we possesst.”

 

রবীন্দ্রনাথ লিখছেন,

তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি

বিচিত্র ছলনাজালে,

হে ছলনাময়ী।

মিথ্যা বিশ্বাসের ফাঁদ পেতেছ নিপুণ হাতে

সরল জীবনে।

এই প্রবঞ্চনা দিয়ে মহত্ত্বেরে করেছ চিহ্নিত;

তার তরে রাখ নি গোপন রাত্রি।

তোমার জ্যোতিষ্ক তা'রে

যে-পথ দেখায়

সে যে তার অন্তরের পথ,

সে যে চিরস্বচ্ছ,

সহজ বিশ্বাসে সে যে

করে তা'রে চিরসমুজ্জল।

বাহিরে কুটিল হোক অন্তরে সে ঋজু,

এই নিয়ে তাহার গৌরব।

লোকে তা'রে বলে বিড়ম্বিত।

সত্যেরে সে পায়

আপন আলোকে ধৌত অন্তরে অন্তরে।

কিছুতে পারে না তা'রে প্রবঞ্চিতে,

শেষ পুরস্কার নিয়ে যায় সে যে

আপন ভান্ডারে।

অনায়াসে যে পেরেছে ছলনা সহিতে

সে পায় তোমার হাতে

শান্তির অক্ষয় অধিকার।

এই কথাগুলো লিখতে লিখতে আমার স্মরণে এল স্বামীজির একটা চিঠির কথা।

 

স্বামীজি ২রা সেপ্টেম্বর ১৮৯৯ কোনো এক অজ্ঞাত কাউকে চিঠিতে লিখছেন -

“Life is a series of fights and disillusionments.”

 

তবে কি বুঝছ মন? ধরো, আমাজন বা ফ্লিপকার্টে ‘জীবন’ বলে কিছু বেচা হত, তবে ‘অথোরাইজড কাস্টমার’ হিসাবে এনারা যে ফিডব্যাক জীবন সম্বন্ধে লিখেছেন তাতে আশাপ্রদ কিছু নেই। কিন্তু মুশকিল হল রিটার্ন বা চেঞ্জ অপশান যখন নেই তখন ছলনা সইতে সইতেই কাটিয়ে দিতে হবে এ নিয়ে কোনো সংশয় আর রইল না। তাই নয় কি? (মন বেজার মুখে মাথা নাড়ল, মানে এখনও অন্য অপশান খোঁজার মতলব। মরবি রে মন মরবি, সাথে আমাকেও মারবি!)