Skip to main content

গলির মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে মাথাটা গরম হয়ে যায়। এত নোংরা। আর বৃষ্টির জলে কুকুরের গু.... গোবর....

মাথাটা টিসটিস করে। বমি পায়। ঘাড়টা শক্ত করে হাঁটতে হাঁটতে নিজেকে বলে, আর ক'টা দিন।

শ্রাবণী। শাড়িটা বৃষ্টির জলে বাঁচাতে বাঁচাতে যখন পার্টির বাড়ি এসে ঢুকল, তখন সাড়ে আটটা বাজতে দু'মিনিট বাকি।

ঢুকেই শুনল, আজ পেশেন্টের শরীর খুব খারাপ। বমি-পায়খানা হচ্ছে।

=====

বিরাশি বছরের বৃদ্ধ। কঙ্কাল। চাদর ঢাকা দিয়ে শুয়ে। দেওয়ালের দিক ফিরে। এসিটা এত ঠাণ্ডা করে রাখে কেউ? এমনিতেই পায়খানা হলে শীত শীত করে।

শ্রাবণী আয়নার সামনে দাঁড়ালো। নিজেকে দেখল কিছুক্ষণ। নিজেকে চিনতে চেষ্টা করা একটা মুদ্রাদোষ ওর। যখন তখন নিজেকে নিয়ে ভাবা একটা মুদ্রাদোষের মত। যদি পলাশের অ্যাক্সিডেন্টটা না হত। যদি ছেলেটা না হত। যদি মেয়েটা না হত। যদি সে একা হত। যদি সে বিয়েই না করত।

সেঁজুতি এইটে পড়ে। সুশান্ত ইলেভেনে। কেউ পড়ে না। স্কুলে যায় আর টিউশান যায়।

=====

শ্রাবণী বিছানার চাদরটা বদলাবে। বুড়ো মানুষটাকে একবার বাঁদিকে সরিয়ে, একবার ডানদিকে সরিয়ে বিছানার চাদর পাতবে।

শ্রাবণী শাড়িটা বদলে একটা নীল নাইটি পরল। আবার আয়নার সামনে দাঁড়ালো। নিজের চোখের দিকে তাকালো। যেন স্কুলের বান্ধবী, জানলার ওপারে এসে দাঁড়িয়েছে। সুখী বান্ধবী। নিজেকে নিজে হিংসা করা যায়? যায় তো। শ্রাবণী করে। ঈর্ষা। কিভাবে?

রক্ত?

দাদুর হিসির সঙ্গে রক্ত আসছে। মানে এরা আবার নার্সিংহোমে নিয়ে যাবে। নুনু দিয়ে কি একটা নল পরায়, কি ক্যাথেটার না কি একটা বলে। উফ্...! দাদু যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যায়। শ্রাবণীর হাতটা ধরে। শ্রাবণী দাদুর হাতটার দিকে তাকায়। সাদা সরু হাতে নীল নীল শিরা। দাদুর হাতটা দেখলে সরু বাঁশের কথা মনে হয়। পুজোর প্যাণ্ডেল, পলাশের শ্রাদ্ধের প্যাণ্ডেল, বাবার কাজের প্যাণ্ডেল….. সব মনে পড়ে যায়। দাদুর কাজে এরা ডাকবে? মনে হয় না।

শ্রাবণী মাঝে মাঝে নার্সিংহোমে যায়। দাদুকে দেখে আসে। দাদু বলে, আমি চলে গেলে আরেকটা দাদু খুঁজে পাবি তো? হাসে।

শ্রাবণী আবার মুদ্রাদোষে ফিরে যায়। যদি সে নার্সিংহোমে কাজ করত? যদি সে অনেক বড় বাড়িতে জন্মাত। যদি সে পড়াশোনায় ভালো হত। কিম্বা যদি সে নষ্ট মেয়েমানুষ হত?

=====

রাতে কাউকে কিছু বলল না। মানত করল। রক্ত বন্ধ হলে মায়ের কাছে উপোস দেবে। দু'দিন। আবার নতুন কাজ খুঁজতে ইচ্ছা করে না।

রাত হল। দাদুর ডাইপার পাল্টালো দু'বার। রক্ত আসছে। হাগুটা জলের মত। মরে যাবে রাতেই?

শ্রাবণী খেতে বসল। রুটি, চচ্চড়ি আর একটা মাছের টুকরো। ভাজা। সারা ঘর গুয়ের গন্ধ। আসলে এসি চলছে তো। কিন্তু এরা বাইরে খেতে দেয় না। এদের বাড়ির বুড়িটার শুচিবাই। এ ঘরেও ঢোকে না। স্নানের আগে একবার দরজাটা ফাঁক করে উঁকি মেরে চলে যায়।

শ্রাবণীর গোটা ভাতটা খেতে ইচ্ছা করল না। মাছ ভাজাটা নিয়ে টয়লেটে এসে বসল। এখানে বরং ভালো গন্ধ। একটা বালতি উপুড় করে বসল। মাছভাজাটা খেতে খেতে, কাঁটাগুলো কমোডে ফেলতে ফেলতে মনে হল, ঘরে যেন কেউ এসেছে। দরজাটা ফাঁক করে তাকালো। কেউ নেই। দাদু পাশ ফিরল।

আবার এসে বালতির উপরে এসে বসল।

=====

রক্ত বন্ধ হল না। সকালের আয়াকে বলে রাস্তায় যখন নামল তখনও মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। আজই নার্সিংহোম নিয়ে যাবে দাদুকে। এই গুয়ের রাস্তা, গোবরের রাস্তা আজ আর পেরিয়ে আসতে হবে না। আজ রাতে আর মানুষটার গু-মুতের গন্ধ শুঁকতে হবে না। যদি মানুষটা মরে যায়?

আচমকা কান্না পেল। যেন এরা সবাই আত্মীয়। যদি সে এ বাড়ির কেউ হত। যদি এ বাড়ির ওই সাদা লোমওয়ালা কুকুরটা হত।

নিজের মুদ্রাদোষে ডুবে হাঁটতে হাঁটতে আবার পেশেন্ট বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো।

দাদুর ছেলে বাইকটা ধুচ্ছে…. তাকে দেখে এগিয়ে এসে বলল, কিছু বলবে?

একটা হাফপ্যান্ট আর লাল হাতকাটা গেঞ্জি পরে তাকিয়ে তার দিকে। তার বুকের দিকে তাকাতো আগে। এখন তাকায় না। তার বুক যদি আরো স্পষ্ট হত। আরো উঁচু হত। এতটা তাচ্ছিল্য থাকত চোখে?

বলছিলাম, দাদুকে কি ওই নার্সিংহোমেই ভর্তি করবে?

আরে সে এখনই বলব কি করে? তোমায় রাত্তিরে আসতে হলে কল করে দেব…

শ্রাবণী ফিরে যাচ্ছে। মুদ্রাদোষে নিজেকে ভাঙতে ভাঙতে। যদি সে অন্য কেউ হত। যদি তার জন্যে কেউ এ বাড়িতে অপেক্ষা করত? হঠাৎ মনে হল, কাঁটাগুলো ফ্লাশ করেছে?

থমকে দাঁড়ালো। মনে পড়ছে না। হাতটা অবশ লাগছে। পা'টাও। যদি আর না ডাকে?

ফিরবে? না থাক। যদি সে……