Skip to main content

এপিকটেটাস খুব বড় একজন দার্শনিক ছিলেন। খুব কঠিন জীবন ছিল। এক ধনীর বাড়ি দাসত্ব করতেন। মালিকের খুব সুনজরে ছিলেন না। এত মার খেতেন, এত মার খেতেন যে অনেকে বলেন তিনি নাকি প্রায় পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন। ওনার সম্বন্ধে এই কথাটা শুনেই আমার আমাদের অষ্টাবক্র মুনির কথা মনে পড়ে। তারও দেহের আকার নাকি এমনই ছিল। সবাই তো রাম ঠাকুর বা রামপ্রসাদের মালিকের মত মালিক পান না, যারা গুণের কদর করে তাদের মান দিয়ে মুক্তি দেবেন, অগত্যা এপেক্টেটাসও পাননি।

তো যা হোক, অবশেষে সে মালিক এপিকটেটাসকে কাজ থেকে অব্যহতি দেন। এপিকটেটাস নিজের মত একটা স্কুল খোলেন। স্টোয়িক দর্শনে বিশ্বজোড়া খ্যাতি আজও ওনার।

হঠাৎ কেন ওনার কথা বলছি। ওনার দর্শনের একটা দিক আমার খুব ভালো লাগে। উনি বলতেন সব সমস্যাকে দুটো ভাগে ভাগ করা যায়। আমার নিয়ন্ত্রণাধীন আর আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আজ এই সময়ে এই কথাটাই ভাবছিলাম। ধরুন কোভিড হলে কি হবে, টেস্ট কিট পাব কিনা, বেড পাব কি না, অক্সিজেন পাব কি না এই সব কি আমার নিয়ন্ত্রণে? নেই তো। বরং মাস্কটুকু ঠিকভাবে পরা, স্যানিটাইজ করা আর ভিড়-টিড় এড়িয়ে চলা এইটুকুই পারি। আর অবশ্যই সময় সুযোগ করে ভ্যাক্সিনটা নিয়ে নেওয়া। সেও আবার নিয়ে কি হবে না হবে তাও আমার হাতে নেই। তাই শুধু মুখে-নাকে না, ভাবনাগুলোতেও এইবার ফিল্টার লাগাতেই হবে। নইলে যতটা সুস্থ থাকলে অন্তত নিত্য কাজগুলো করা যায় সেটাও থাকবে না। খবরের কাগজ, টিভি - বিশেষ করে বাংলা মিডিয়াগুলো আতঙ্ক তৈরি করতে ওস্তাদ। ওগুলোতে যত না তথ্য থাকে তার চাইতে বেশি রং থাকে। সেগুলো দূরেই থাক যতটা সম্ভব।

কঠিন কাজ নিশ্চয়। তা এই সুকঠিন সময়ে নিজেকে আর কি সোজা উপায় দেব? "ও আমার কিছু হবে না".... কিম্বা "আজ না তো কাল হবেই, তখন..." এসব দৈব নিয়ন্ত্রণাধীন চিন্তাকে আমল দিলেই সব্বনাশ। মনোবিদেরা বলেন, দক্ষতা ও কাজের একটা সাম্য থাকা দরকার। দক্ষতার চাইতে কাজ হাল্কা হলে মানুষ বোর হয়। আর দক্ষতার চাইতে কাজ কঠিন হলে মানুষ উদ্বিগ্ন হয়। এখন কথা হল এত এত চিন্তা করার মত দক্ষতা আমাদের কি আছে? তাও কি সম্ভব? তবে আর ভাইরাস মিউটেট করল কি না, কতগুলো গুষ্ঠি হল, কত দিনে নামবে বাড়বে ভেবে কি আর কূল পাব মন? তার চাইতে নিজের ক্ষমতার মধ্যেই বাঁচি। অমরত্ব নিয়ে আসিনি জানি। কিন্তু সারাটাক্ষণ যমের খাতার হিসাব রাখব আর তার নুপুরধ্বনিতে কান পেতে থাকব, সেই বা কি বুদ্ধি? ভাবতেই যদি হয় সেই জীবন মরণের সীমানা ছাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধুর কথাই না হয় ভাবি...