চারটে বাচ্চা নিয়ে বেড়ালটা রাস্তার উপরে বসে আছে। উল্টোদিক থেকে রুদ্ধশ্বাসে সাইকেল চালিয়ে তিনজন কিশোর আসছে। সামনের জন তাড়াতাড়ি সাইকেলের ব্রেক চেপে সাইকেলটা থামালো। তার দেখাদেখি বাকি দুজনও। ছেলেটা বলল, আরে সামনে বেড়ালের বাচ্চা।
বেড়ালের বাচ্চাগুলোকে চাপা দিয়েও চলে যেতে পারত। কিন্তু মানুষ তা করে না স্বাভাবিক মানসিক অবস্থায়। সে চাপা দিল না, কারণ ওটা মনুষ্যোচিত নয়। এর পিছনে তার না আছে কোনো পুণ্যের কামনা, না তো কর্তব্যবোধের তাড়না। অতশত ভাবারই নেই কিছু। এটা স্রেফ মানুষের স্বভাব। এর জন্য না লাগে ধর্মীয় শিক্ষা, না নীতিশিক্ষা। একটা সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশে একটা বাচ্চা বড় হলেই তার এমনই স্বভাব হবে।
একটা খাঁচায় একটা প্রমাণ সাইজের সুস্থ বাঘ আছে। তার সামনে চেয়ারে বসে পণ্ডিতগণ। হিসাব করছে, বিচার করছে। যদি বাঘটাকে ছেড়ে দেওয়া হয় তবে কার কী কর্তব্য? চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে। সরবত থেকে চা, তার সঙ্গে নানা দেশবিদেশের খাবারের আয়োজন আছে। বাঘটা খাঁচা থেকে বসে বসে দেখছে। তাকেও খেতে দেওয়া হয়েছে। সেও আলোচনা শুনছে। আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছে না। স্কেপ্টিক, ডগম্যাটিক, এম্পিরিসিস্ট, র্যাশেনালিস্ট, পোস্টমর্ডানিস্ট ইত্যাদি নানা তত্ত্ববিদেরা বিশ্লেষণের পর বিশ্লেষণ করেই যাচ্ছে। মাসের পর মাস চলে গেল। কোনো সিদ্ধান্তে আসা গেল না।
তখন একজন নিতান্ত অশিক্ষিত, অপণ্ডিত গিয়ে খাঁচাটা টুক করে খুলে দিল। বাঘটা প্রবল গর্জন করে লাফ দিয়ে সামনে এসে পড়ল। ব্যস, বাকিটা আর বর্ণনা করতে হবে না। সহজেই অনুমেয়।
ঠিক এটাই হয়। 'হাগায় যতক্ষণ না ঠেলে তোলে" ততক্ষণ গড়িমসি আর ভাববিলাসিতায় দিন যায়। কিন্তু যখন জীবনমরণ সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, তখন? তখন ভাবার সময় নেই। তখন কাজের সময়।
সমস্যাটা হল যাদের খাঁচায় বাঘ, তারাই বসে বসে ঘোঁট পাকায়। যাদের পিছনে বাঘ তাদের নিয়ে সমস্যা নেই।