“Minds, however, are conquered not by arms, but by love and nobility” - Spinoza
জীবনের নিজস্ব একটা আবেগ থাকে। ঠিক ইমোশান, সেন্টিমেন্ট বলতে যা বোঝায় তা নয়। নিজের মধ্যে নিজের একটা আবেগ। হয় তো একেই রবীন্দ্রনাথ “আনন্দ” বলেছিলেন। উপনিষদ থেকে শব্দটা ছেনে এনেছিলেন। শুধু ছেনে আনেননি, সুখের থেকে যে এ আলাদা সেটাও গানে, নাটকে, কবিতায় বুঝিয়েছিলেন। জীবন দিয়েও বুঝিয়েছিলেন।
এ আনন্দ জীবনের সঙ্গে সমার্থক। আমি যে আছি, এই থাকার সুরটাই এ আনন্দ। হয় তো আমি সুখী নই, হয় তো আমার অনেক অনেক অভাব। কিন্তু এ আনন্দকে আমার কাছ থেকে কেউ কাড়তে পারে না যদি না আমি নিজে একে নষ্ট করি। দুরাশায়। ক্ষোভে। লোভে।
এক তরুণ স্টেশানে বসে বাঁশি বাজাচ্ছে। তার বাঁশিতে যে খুব একটা সুর আছে, তেমন নয়, কিন্তু আন্তরিক চেষ্টা আছে। সে সুস্থ না। না মানসিকভাবে। না শারীরিকভাবে। বাইরে থেকে দেখলে সে শুধুই কুরূপ। সে সবার দিকে তাকিয়ে হাসছে। বাঁশি বাজাচ্ছে। সবার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছে। কেউ-ই প্রায় সাড়া দিচ্ছে না। দেবেই বা কেন। স্টেশানে সবার তাড়া। তায় ভিখারি, অপ্রকৃতিস্থ পঙ্গু। কে দাঁড়াবে ওর জন্য?
সে বসে আছে। খানিকবাদে একজন মহিলা এসে ওর পাশে বসলেন। অপুষ্ট চেহারা। একটা ছেঁড়া ময়লা শাড়ি গায়ে। বসেই ছেলেটাকে বললেন, জল খেয়েছিস? বাঁশি বাজাতে গেলে অনেক জল খেতে হয়। নইলে বুকে রোগ হয়।
ছেলেটা শুনল না। উঠে গিয়ে স্টেশানের একটা বেঞ্চে বসল। সে মহিলাও উঠে গেলেন। ব্যাগ খুলে জলের বোতলটা বার করে, তার ছিপি খুলে, ছেলেটার মাথাটা বাঁহাতে ঠেলে, মুখটা উঁচু করিয়ে, তার মুখে জল ঢালতে লাগলেন। ছেলেটা প্রায় অর্ধেক বোতল জল খেল। মহিলা আঁচলে তার মুখটা মুছিয়ে আবার এসে বসলেন আগের জায়গায়।
যে ছেলেটাকে এতক্ষণ অবান্তর লাগছিল, এত পারফেক্ট, সচ্ছল সমাজের উঠানে, সে এই ক্ষুদ্র খণ্ড চিত্রে হয়ে উঠল একজন গোটা মানুষ। যাকে কেউ ভালোবাসে। তার সব পঙ্গুত্ব, অপ্রকৃতিস্থতা ছাপিয়ে ভালোবাসে।
এই ভালোবাসাই সে আনন্দের প্রকাশ। যার আনন্দ নেই, তার ভালোবাসাও নেই। জগত সংসার নিখুঁত, চ্যুতি মুক্ত নয়। কিন্তু আনন্দ নিজেই নিজেতে পূর্ণ। কী করে এ আনন্দ আছে, সে ব্যাখ্যা কেউ কোনোদিন খুঁজে পাবে না। কিন্তু এ আছে। একে সজ্ঞানে লাভ করার সাধনাকেই উপনিষদ বলছেন ভূমাকে পাওয়া। এ কথা রবীন্দ্রনাথ বলেছেন। শিখিয়েছেন। নইলে “রাজার অসুখ” এর যে কোনো চিকিৎসা নেই। সব নিখুঁত করে দাও, তবে আমি তৃপ্ত হব - এ পাগলের প্রলাপ, নয় তো মতলবীর কথা। স্বাভাবিক মনের কথা তো নয়। তাই প্রাজ্ঞরা বলেন, আনন্দের চেষ্টাকেই বলে মঙ্গল। লোভের চেষ্টায় অমঙ্গল।
“Though man, therefore, generally directs everything according to their own lust, nevertheless, more advantages than disadvantages follow from their forming a common society. So it is better to bear men's wrongs calmly and apply one's zeal to those things which help to bring men together in harmony and friendship.” - Spinoza